সামনে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদ, স্রোতের টানে ভেসে চলা পালতোলা নৌকা, বাতাসে নদের অপর তীরের দোল খাওয়া কাশবন, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ আর খণ্ড খণ্ড শুভ্র মেঘে ঢাকা নীল আকাশ মাথায় নিয়ে বিস্তৃত সবুজ রেখার মতো দূর গ্রামগুলো। সমাজ-সংসারে ব্যস্ত থাকা ক্লান্ত ও বিষণ্ন মন এমনতর উদার প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে নিজের অজান্তেই স্মিগ্ধ হয়। আরও আনন্দময় প্রাপ্তি হলো চোখ জুড়ানো এ দৃশ্যটি যেখানে বসে দেখার সুযোগ, সেটিও যে ছড়ানোছিটানো ছোট-বড় গাছগাছালি নিয়ে আরেক সবুজ ছায়াশীতল রাজ্যের অংশ। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে সবুজের সমাহার আর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে ময়মনসিংহ শহরবাসীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এ জায়গাটি হলো সাহেব কোয়ার্টার পার্ক আর এর পাশের এলাকা। প্রতিদিন ভোরে প্রবীণদের প্রাতর্ভ্রমণ, দুপুরে তরুণ-তরুণীদের চুপিসারে আড্ডা কিংবা বিকেলে মা-বাবার সঙ্গে শিশু-কিশোরদের বৈকালিক ভ্রমণ-সবকিছু ময়মনসিংহ শহরের এ একটি জায়গাকে কেন্দ্র করেই।

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের তীরে সাহেব কোয়ার্টার পার্ক আগেও ছিল। বছরসাতেক আগে পার্কের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের পাশটুকু ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়। এরপর নদ, নদের তীরের পাকা বাঁধ আর পার্কের ভেতরের গাছগাছালি মিলে পার্কের পুরো দৃশ্যটিই হয় মায়াময় আর আকর্ষণীয়। মানুষের প্রশংসা, সহযোগিতা, বনবিভাগের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও আন্তরিকতা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগী ভূমিকায় পার্কের এ দৃশ্যটির বিস্তৃতি ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলে। এ ধারাবাহিকতায় পার্কসংলগ্ন নদের তীর ছুঁয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাকা বাঁধ পার্কের সীমানা ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে যায় পূর্ব দিকে। সে সময়ে পার্কের সীমানার বাইরের এ অংশটি ছিল ময়লা-আবর্জনার স্তূপে ভরা।এ অংশের স্তূপাকার আর্বজনা সরিয়ে ফাঁকা অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। মাটি ভরাটের এ কাজটি চলে নদের বাঁধের উচ্চতার সঙ্গে মিলিয়ে। এরপর প্রতি বর্ষায় হাতে নেওয়া হয় বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সাহেব কোয়ার্টার পার্কসংলগ্ন পূর্ব দিক ভরে যায় নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে।

ময়মনসিংহ বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাত বছরে পার্কে এবং পার্কের সীমানার বাইরে পূর্ব দিকে প্রায় চার একর জায়গায় পাঁচ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে আছে বনজ, ফলদ, ঔষধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ। একটু আগ্রহ নিয়ে সন্ধান করলেই এখানে যেসব গাছের দেখা মেলবে সেগুলো হলো নিম, মহুয়া, অর্জুন, নাগেস্বর, চন্দন, আগর, তমাল, কদম, বকুল, কাঞ্চন, জারুল, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জলপাই, আমলকী, হরীতকী, বহেরা, তেঁতুল, লটকন, বইচি, চম্পা, গোলাপজাম, কাঁঠবাদাম, মেহগনি, রাজকড়ই, গর্জন, তেলসুর, চালতা, গামার ইত্যাদি। প্রায় ছয়-সাত বছর আগে শুরুর দিকে রোপণ করা গাছগুলোর উচ্চতা এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। সব গাছেরই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা এবং বেঁচে থাকার কারণে দূর থেকে এখন এ পার্কটি এবং এর লাগোয়া পূর্ব দিকের নদের তীরের স্থানটিকে এক সবুজ বেষ্টনী মনে হয়।

সাহেব কোয়ার্টার পার্কে আসার চারটি পথ আছে। এগুলো হলো শহরের কাঁচিঝুলি মোড় থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার সামনে দিয়ে, জেলা প্রশাসকের বাসার সামনে দিয়ে, সার্কিট হাউস মাঠের দক্ষিণ প্রান্ত পণ্ডিতপাড়া ক্লাবের সামনে দিয়ে এবং কাচারিঘাটসংলগ্ন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে। ভোরের আলোর আভা ছড়ানোর আগেই এখানে পা পড়ে স্বাস্থ্যসচেতনদের। ভোরের প্রথম লাল সূর্য ক্রমশ সোনালি আভা ধারণ করে আর দলে দলে নানা বয়সী লোকজন চারদিকের পথ দিয়ে আসা শুরু করে এ সবুজের জগতে। আলো-আঁধারের ভোরেই এ শহরের অনেক সাধারণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরই গন্তব্য এ চত্বর। কেউ হাঁটছে, কেউ বা দৌড়াচ্ছে। নদের তীরের খোলা হাওয়ায় কেউ দিচ্ছে বুক ডন, কারওবা হাত-পায়ের ছোড়াছুড়ি কিংবা ঠায় দাঁড়িয়ে উঠবস। মনে হয় মহড়া চলছে দেহের অসুস্থতা আর মনের অশুদ্ধতার বিরুদ্ধে।

সকালের পর দুপুরেও নদের তীরের সবুজের এমন সান্নিধ্যে থাকা মানুষের অভাব নেই। আর বিকেলে এ জায়গাটি হয়ে যায় পারিবারসহ বেড়ানোর দারুণ এক স্থান।এ সময় দলে দলে শিশুরা আসে তাদের মা-বাবার হাত ধরে। আসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ শহরের বৈকালিক ভ্রমণের মূল আকর্ষণ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের এ সবুজ চত্বর। ময়মনসিংহ শহরবাসীর সৌভাগ্য, এক সবুজ ছায়ার জগতের নাগাল তাঁরা পান হাত বাড়ালেই। বিনোদনবঞ্চিত দৈনন্দিন যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা হলেও স্মিগ্ধতার পরশ মেলে এ সবুজের জগতে এসে।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Day Long Package

মূল্য: ৩,০০০ টাকা

US Visa for Retired Person

মূল্য: 5,000 Taka

US Visa (Spouse)

মূল্য: 5,000 Taka

শুধু প্রকৃতির দর্শন নয়, এখানে ইচ্ছে করলে হালকা চা-নাশতা খাওয়ারও সুযোগ আছে। চা, চটপটির পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। এসব দোকানের চেয়ারে বসে চা-নাশতা খেতে খেতে গল্প-গুজবে সময় কাটানো যায়। পার্ক ঘেঁষে ব্রহ্মপুত্র নদে আছে বেশ কটি ঘাট। সেখানে নৌকা বাঁধা থাকে সব সময়। ইচ্ছে করলে এসব নৌকায়ও ভ্রমণ করা যায়। নৌকা দিয়ে নদ পার হয়ে পাড়ের কাশবনে গিয়েও হাঁটাহাঁটি করা চলে।

ময়মনসিংহের পরিবেশবাদী সংগঠন প্রেরণার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হাসান খান জানান, এ জায়গাটি নিয়ে এখন ময়মনসিংহবাসী গর্ব করতে পারেন। বাইরের লোকজন এ জায়গায় বেড়াতে এসে মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়।

নিয়ামুল কবীর সজল, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...



৯২৮ বার পড়া হয়েছে