করোনা সংক্রমণের বাড়াবাড়ি কিছুটা কম। কিন্তু তার মধ্যেই আশঙ্কা বাড়ছে তৃতীয় তরঙ্গের। এমন সময়ে বেড়াতে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে খুব যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু পাহাড়ি পরিবেশে, যেখানে পর্যটকের সংখ্যা কম, তেমন জায়গায় যাওয়া তুলনামূলক নিরাপদ। বিশেষ করে পাহাড়ি পথে হাঁটা ও ঘোরা এ সময়ের জন্য একটু স্বস্তির।
বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় জেলা বান্দরবান। বান্দরবান জেলা হচ্ছে পার্বত্য জেলা- আমাদের দার্জিলিং। এ পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঙালি ও বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যকার সম্প্রীতির এক বিরল দৃষ্টান্ত। নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, বগালেকের মতো অসংখ্য ট্যুরিস্ট স্পট আছে এ জেলায়। একমাত্র পাহাড়ি নদী সাঙ্গুর অনুপম দৃশ্য মন জুড়িয়ে দেয়। বান্দরবানের চমৎকার একটি স্পট নীলগীরি।
নীলগিরি টু থানচি রোড। মেঘের মধ্য দিয়ে পথ চলা। শহর থেকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি প্রায় ৮০ কিমি পথ বেয়ে থানচি। শুরু থেকেই রোমাঞ্চকর যাত্রা। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ রোমাঞ্চ জাগানিয়া। একটু যেতেই মেঘপরীদের খেলা। বান্দরবান থেকে থানচি যেতে যেতে চোখে পড়বে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি-নীলগিরি থেকে সাঙ্গু নদী, চিম্বুক পাহাড়ের কারিকুড়ি- সৌন্দর্য, নীলগিরি আর চারিদিকে ফুল-গাছে এঁকেবেঁকে রোমাঞ্চকর চড়াই-উতরাই পথ। আর পথে পথে আদিবাসী গ্রাম।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেঘপরীরা ক্লান্ত হয়ে যায়। খেলা কমিয়ে দিতে থাকে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী বাজার দেখা যায়। পেঁপে, আনারস, কলার আধিক্য এখানে। পাহাড়িদের বিচিত্র জীবনযাত্রা উপভোগ করতে করতে ছুটে চললাম গন্তব্যের দিকে। পাহাড় পথের মোড়ে মোড়ে ও উপত্যকায় ছোট ছোট গ্রাম বা বাজার চোখে পড়ে। গ্রামবাসীর বেশিরভাগই বাঁশ-মাটির বাড়ি, সহজ-সরল জীবনযাত্রা এদের। বাড়িগুলোর সুন্দর অলঙ্করণ বেশ চোখ টানে। কৌতূহলী গ্রামবাসী জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পর্যটকদের দিকে। মনে হয় খাঁচায় বন্দি এরা। বর্ষায় এই পথজুড়ে নানা রঙের ফুল- বেশির ভাগই সাদা ও কম উজ্জ্বলের, শোভা বাড়ায় গুল্মগাছ।
ডান বা বাঁ-দিকে সারি সারি পাহাড়শ্রেণি। উঁচু উঁচু সবুজ পাহাড়ে মেঘ আটকে যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন পাখির কলতান মুগ্ধ করছে। এসব উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের নীলগিরি, তারপর থানচি। কী নান্দনিক দৃশ্য! অনেক উঁচুতে আপনি, আর মেঘমালা ভেসে বেড়াচ্ছে নিচে, পাহাড়ে। দূরের সিঁড়ির মতো পাহাড়। আকাঁবাঁকা পথ- কী দারুণ দেখতে! বাজারের কাছাকাছি সাঙ্গু মিশেছে পাহাড়ের সঙ্গে। কী অপূর্ব দৃশ্য!
এবার ফেরার পালা। ৩০-৩৫ কিমি ফিরতিপথে পাহাড়ি সাঙ্গু নদী উঁকি দিচ্ছে। কী মনোলোভা! নীলগিরির আগে থেকেই মিলনছড়ি পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে সাঙ্গুর এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য মন ভরিয়ে দেবেই। এরপরই চিম্বুক পাহাড়। ২০ টাকার জনপ্রতি টিকিট কেটে উঠতে পারেন চিম্বুক পাহাড়ে।
চিম্বুক সারা দেশের কাছে পরিচিত নাম। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। চিম্বুক বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। একটু উপরে উঠতেই চোখ ছানাবড়া। পাহাড় আর পাহাড়! আহা! কী সুন্দর বান্দরবান! চোখ ফেরানো যায় না! যতদূর চোখ যায়, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ে লুকিয়ে শুভ্র মেঘ। কিছু মেঘমালা ওড়াউড়ি করছে। কী যে শিহরণ জাগানিয়া দৃশ্য! না দেখলে বিশ্বাস করানোই কঠিন! চিম্বুক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের পাহাড়ি দৃশ্য খুবই মনোরম।
পথজুড়েই দেখখা যায় মেঘের খেলা। বিশেষ করে সকালের দিকে। বর্ষা ও শরতে প্রায় সবসময় এমন দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। নিচে শুভ্রমেঘের সারি আর উপরে কালোমেঘের ঘনঘটা- কী দারুণ! কী রোমাঞ্চকর পথ! বান্দরবানের পাহাড় পথ।
ফিচার বিজ্ঞাপন
যমুনা রিসোর্ট প্রাইভেট ডে লং ট্যুর
Water Lodge
Kolkata – Gangtok (Sikkim) 5D/4N
শহর থেকে ৮-১০ কিমি দূরেই শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। এখানে উপজাতীয়দের ছোট বাজারও আছে। ফলমুল ও পাহাড়ি পোশাক কেনাকাটা করতে পারবেন। কিছুদূর যেতেই সাঙ্গুর অপরূপ দৃশ্য। সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতেই যেন আগলে রেখেছে বান্দরবানের এমন সৌন্দর্য।
মেঘ পাহাড় আর জল- বান্দরবানের ঐতিহ্য ও ইতিহাস। দেশের বড় বড় পাহাড়-পর্বত এ জেলায় অবস্থিত। বিভিন্ন ঝিরি ও জলাধার সবুজের মাঝে নান্দনিক দৃশ্য সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ি নদী সাঙ্গু ঋতুতে ঋতুতে রূপ পাল্টায়। বর্ষায় পলি নিয়ে ভরা যৌবন, শীতকালে স্রোতের বেগ কমে আসে- উঁচু থেকে উপত্যকায় যেন নীলরঙের লেক। বাঙালি ও নানারকমের উপজাতি, সবুজ পাহাড়, বন-বনানী ও পাহাড়িদের জীবনযাত্রা বান্দরবানে এক অপূর্ব সম্প্রীতির বন্ধন।
যাতায়াত:
বাসযোগে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম। ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনেও চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। এরপর বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে এসি-ননএসি বাসে বান্দরবান। ঢাকা থেকে শ্যামলী, ইউনিক, হানিফ, সেন্টমার্টিন পরিবহনসহ বেশ কিছু বাস সকাল-রাতে সরাসরি বান্দরবান যায়। ভাড়া ৬৫০ থেকে শুরু।
থাকা ও খাওয়া:
থাকা ও খাওয়ার জন্য বান্দরবানে বিভিন্ন মান ও দামের অনেক হোটেল-রিসোর্ট পাওয়া যাবে। বাস টার্মিনালের কাছেই বেশ কিছু আবাসিক ও খাওয়ার হোটেল পাবেন।
গাড়ি ভাড়া:
টার্মিনালের কাছেই নীলগিরি, নীলাচল বা থানচি যাওয়ার সিএনজি, চাঁদের গাড়ি পাওয়া যাবে। থানচি যাওয়া-আসা করতে ছোট-বড় চাঁদের গাড়ি ৪০০০ টাকা থেকে শুরু। ৫-১৫ জন যাতায়াত করা যাবে। আর ২-৩ জনের জন্য সিএনজি ভাড়া পাওয়া যাবে। ভাড়া কমবেশি দুই হাজার। এ চুক্তি নীলগিরি, মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড় ও শৈলপ্রপাতের প্যাকেজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নীলাচল, মেঘলা বা শহরের কাছাকাছি ভ্রমণের জন্য কমবেশি হাজারের কাছাকাছি (স্পটপ্রতি) সিএনজি-চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে। এক বা দুইজন হলে অন্য কোনো পার্টির সঙ্গে শেয়ার গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। নতুবা খরচ অনেক বেশি পড়বে। ঘুরতে হলে এখানে রিজার্ভ ছাড়া গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে বান্দরবান থেকে থানচি ভায়া নীলগিরি-চিম্বুক লোকাল বাস চলে। ভাড়া ২০০ টাকা। দিনে মাত্র ৩-৪ ট্রিপ চলে। বাসে গেলে বাসেই ফিরে আসতে হবে। ঘোরাঘুরির সুযোগ একেবারেই কম পাবেন। তবে চারিদিকের মোহনীয় রূপ দেখার কমতি হবে না!
উপজাতীয় বাজার:
বান্দরবান শহরে দিন-রাতে উপজাতীয় বাজার বসে। এটা মগ বাজার নামেই পরিচিত। পাশেই বার্মিজ বাজার। এছাড়া জেলার বিভিন্ন রোড-সাইডে ছোট-বড় উপজাতীয়দের বাজার বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা হয়।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)১৬৪ বার পড়া হয়েছে