যানজটের শহর ঢাকার পল্লবীতে গেলেই চোখে পড়বে উড়ালপথ। মূল সড়ক থেকে প্রায় ১৩ মিটার উঁচুতে এই পথে বসছে রেললাইন। চলছে স্টেশন নির্মাণের কাজ। বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য খুঁটিও বসে গেছে। এগুলো মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞের অংশ।
শুধু পল্লবী নয়, এর আগে-পরে প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেলের পথের এমন দৃশ্য চোখে পড়বে সবার। ১০ অক্টোবর প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, নানা কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। কেউ রেললাইন বসানোর কাজ করছেন, কেউ করছেন রেলের ডিপোর বিভিন্ন ভবনের সজ্জার কাজ। কাউকে কাউকে দেখা গেল, বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা স্থাপনের কাজে ব্যস্ত।
রাজধানীর যানজট কমাতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়ালপথে ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। এখন আগারগাঁও থেকে উত্তরার (উত্তর অংশ) দিকে এগোলে মেট্রোরেলের অনেকটাই দৃশ্যমান। তবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত (দক্ষিণ অংশ) কাজ ততটা এগোয়নি। এই অংশে খুঁটি উঠেছে। কিন্তু উড়ালপথ দৃশ্যমান হয়নি। ফলে সড়কের মাঝ দিয়ে নির্মাণযজ্ঞের কারণে প্রায় ছয় বছর ধরে নগরবাসী যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তা আরও কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। অবশ্য সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মেট্রোরেল চালুর কথা।
মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর কাজ ছয় মাস পিছিয়েছিল। এবার করোনার প্রভাবটা আরও সুদূরপ্রসারী, শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বর থেকে। এখন প্রকল্পের কাজে যুক্ত বিদেশি নাগরিকেরা ধীরে ধীরে আসছেন। তবে শীতে করোনার প্রভাব বাড়তে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এমনটা হলে প্রকল্প নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে।
উত্তরে এগিয়ে, দক্ষিণে পিছিয়ে
মেট্রোরেলের ১১.৭৩ কিলোমিটার পড়েছে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে। শুরুটা উত্তরায়। সেখানে মেট্রোরেলের ডিপো গড়ে তোলা হচ্ছে ৫৯ একর এলাকাজুড়ে। ডিপোর ভেতরে রয়েছে ছোট-বড় ৫২টি ভবনসহ নানা স্থাপনা। কিছু ভবন পুরোপুরিই প্রস্তুত, দেয়াল লাল টাইলসে মোড়ানো হয়েছে। কোনোটায় চলছে টাইলস স্থাপনসহ অন্যান্য সজ্জার কাজ। অফিসসহ নানা কাজে এসব ভবন ব্যবহৃত হবে।
ডিপোর ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকারের দুটি ছাউনি। একটি ছাউনির নিচে রয়েছে মেরামত কারখানা। অন্য ছাউনির নিচে থাকবে ট্রেন। দুটি ছাউনির ভেতরে প্রয়োজনীয় যন্ত্র-অবকাঠামো বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে স্টেশন থেকে ডিপোতে আসা-যাওয়ার দুটি রেললাইনও বসানো হয়েছে।
উত্তরায় থাকছে মেট্রোরেলের তিনটি স্টেশন। প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর ডিপো থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে। স্টেশনে এখনো সিঁড়ি বসেনি। অস্থায়ী সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠেই বিরাট হলরুম দেখা গেল, যা লম্বায় ১৮০ মিটার আর চওড়া ৩৩ মিটার। এর নাম কনকোর্স হল। যাত্রীরা সিঁড়ি, এস্কেলেটর ও লিফটে চড়ে কনকোর্স হল থেকে টিকিট কাটবেন। এর এক তলা ওপরে ট্রেনে চড়ার প্ল্যাটফর্ম। স্টেশনের ছাউনির কাজ শেষ হয়নি। তবে প্ল্যাটফর্মের কাজ অনেকটাই শেষ। স্টেশনে চারটি রেললাইন বসানোর জন্য রেলের পাত জোড়া দিয়ে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় স্টেশন উত্তরা সেন্টার মিরপুর ডিওএইচএস ও উত্তরার ডিপোর ঠিক মাঝামাঝি। সেখানেও কনকোর্স হল নির্মিত হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের কাজও শেষ পর্যায়ে। চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। ডিওএইচএস লাগোয়া স্টেশন হচ্ছে উত্তরা দক্ষিণ। এখানে কনকোর্স ও প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি স্টেশনের ছাউনির স্টিলের কাঠামো বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এরপর পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আরও ছয়টি স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে আগারগাঁওয়ের কিছু অংশ বাদে পুরোটাতেই উড়ালপথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন রেললাইন বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
বালি-লম্বক-গিলি আইল্যান্ড ৭দিন ৬ রাত
কালিজিরার তেল
কষ্টার্জিত অর্থে সেরা প্রজেক্টে নির্ভেজাল প্লট কিনুন ।
মেট্রোরেলের ৮.১২ কিলোমিটার পড়েছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এই পথে খুঁটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু উড়ালপথ তৈরি হয়নি। এই অংশে সাতটি স্টেশনের কাজও শুরু হয়নি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে কাজ পিছিয়ে থাকার কারণ দুটি। প্রথমত, এই অংশের মূল কাজ শুরু হয়েছে উত্তরের এক বছর পর। দ্বিতীয়ত, এই অংশের মূল ঠিকাদার দুটি জাপানি প্রতিষ্ঠান। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জাপানি নাগরিকেরা নিজ দেশে চলে গেছেন। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার অংশের বাংলাদেশি অংশীদার আবদুল মোনেম লিমিটেড কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনার প্রভাব
মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের আগস্টে। পরের বছরের আগস্টে শুরু হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজ।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। গত জুন থেকে কাজ শুরু হলেও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি নাগরিকদের ৪০ শতাংশ এখনো আসেনি। ফলে কাজে পুরো গতি আসেনি।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ছিল ৪৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে ৭০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ছিল ৩৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
ছয় মাস পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫০.৪০ শতাংশ। আর এ সময় পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজের মোট অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
প্রকল্পের সূত্র জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্পে কম-বেশি ১০ হাজার ব্যক্তি কাজ করেন। এর মধ্যে ১ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক আছেন। জাপান, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ৬০০ জনের মতো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে আছেন।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
২৪৫ বার পড়া হয়েছে