রাঙামাটি-কাপ্তাই গেলে দেখা পাবেন কর্ণফুলী নদী আর কাপ্তাই হ্রদের এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে, সবচেয়ে নির্জন করুণ। সেই স্থানের নাম রাঙামাটি। রাঙামাটির সরোবরটা, জানি পাহাড়িদের অশ্রু মিশে আছে তাতে, তবুও জায়গাটা এত সুন্দর যে তার প্রশস্তি গাওয়ার লোভ সংবরণ করা মুশকিল। রাঙামাটির লেক বেয়ে শুভলং পর্যন্ত একবার যাবেন। দুপাশে নির্জন পাহাড়, সবুজ অরণ্য, তার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে নৌকা। একটা সময় আপনার মনে হবে, আমি পৃথিবীর বাইরে কোথাও—স্বর্গের কাছাকাছি। রাঙামাটি পর্যটন মোটেলের পেছনেই সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত সাঁকোটি, সেখানে একটা নৌকা ভাড়া করে শুভলং যাওয়ার পথেই পেদাটিংটিং রেস্তোরাঁয় আপনি খাবারের হুকুম দিয়ে যাবেন, ফেরার পথে খাবেন পাহাড়ি পদের তরকারি, কলাপাতার মধ্যে, বাঁশের চোঙের মধ্যে রান্না করা মুরগি কিংবা মাছ। আহ্! যে একবার খেয়েছে, সে বারবার যাবে পেদাটিংটিংয়ে।

আমরা দুটো অ্যাডভেঞ্চার করেছিলাম। আমি, মেরিনা আর পদ্য। অনেক বছর আগে। পদ্য তখন ছোট্ট। পর্যটন মোটেলের কাছে এক স্পিডবোটওয়ালাকে বললাম, আমাদের কাপ্তাই নিয়ে যাবে স্পিডবোটে? ‘যাব।’ যাওয়া-আসা কত ভাড়া? ‘তিন হাজার।’

স্পিডবোটে তিনজন উঠে বসেছি, চালক সবার কাছে শেষ বিদায় নিতে লাগল, ‘ভাই, যাচ্ছি। দোয়া কোরো।’ একটু ভয় ভয় লাগল। তারপর যখন দ্রুত গতির ওই নৌযান পাহাড়ের অগম্য শানুদেশ ঘেঁষে মানববসতি থেকে আলোকবর্ষ দূরে চলে গেল, তখন ভয়ে আর সৌন্দর্যের তীব্রতায় আমাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বুঝলাম, কেন চালক সবার কাছে বিদায় নিয়ে এসেছিল।

দ্বিতীয় অভিযানটায় ভয় ছিল না। ছিল রসনার তীব্র তাড়না। দুপুর বারোটায় আমাদের বাস। সকাল সাড়ে দশটার সময় মনে হলো, পেদাটিংটিং রেস্তোরাঁর খাবার না খেয়ে ঢাকায় ফেরা অসম্ভব। এখন ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে গেলে নৌকাভাড়া ৫০০ টাকা, কিন্তু যাতায়াতের সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা। তাহলে এক কাজ করি। স্পিডবোট ভাড়া করি। যেতে লাগবে পাঁচ মিনিট, ফিরতে পাঁচ মিনিট। ভাড়া? ১২০০। আচ্ছা তা-ই সই। আমরা ১২০০ টাকা স্পিডবোট ভাড়া দিয়ে ৫০০ টাকার খাবার খেয়ে ফিরলাম। সরোবরের মধ্যেখানে দ্বীপের মতো জায়গাটায় ওই আদিবাসী রান্নার রেস্তোরাঁর খাবারের এমনই জাদুকরি টান! যখনকার কথা বলছি, তখন ১২০০ টাকার দাম ছিল, আর আমাদের আয়ও ছিল খুব সামান্যই।

এখন টাকার দাম কমেছে। আমাদের সংগতিও হয়তো বেড়েছে একটু। আর বেড়েছে বন্ধুবান্ধব। তাই গত ডিসেম্বরে আবার যাত্রা কাপ্তাই অভিমুখে, সপারিষদ। কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে, তারপর মাইক্রোবাসে সরাসরি কাপ্তাইয়ের বনফুল নামের বন বিভাগের রেস্টহাউসে। ওই রেস্টহাউসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপরে কম্পমান জলের আরশিতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন দেখে আমার মনে হলো, এমন সূর্যের আলো, মরি যদি সেও ভালো, সে মরণ স্বর্গসমান। ওই ওপারে পাহাড়। জঙ্গলে ঢাকা। বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গাও আছে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকেছি, তবে জলের ঘূর্ণি দেখতে না পেয়ে খানিকটা হতাশই হয়েছি। কিন্তু নয়ন জুড়িয়ে গেছে, কাপ্তাই থেকে রাঙামাটিতে ‘ওই রাস্তা’ ধরে আসার সময়। ‘ওই রাস্তা’র আসল নাম কী, আমরা জানি না। সবাই বলে ‘ওই রাস্তা’। আমরাও বলাবলি করছিলাম। পাহাড়ের বুক চিরে লেকের পাশ দিয়ে একটা নতুন রাস্তা হয়েছে, সে রাস্তা দিয়ে যে না গেছে, তাকে বলে বোঝানো মুশকিল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কী সর্বগ্রাসী হতে পারে! এখনো গ্রস্ত হয়েই আছি।

ফিচার বিজ্ঞাপন

USA Visa (Private Job Holder)

মূল্য: 5,000 Taka

Siem Reap Cambodia 4D/3N

মূল্য: 26,900 Taka

কিন্তু সৌন্দর্য খেয়ে পেট ভরে না। আমাদের আসল লক্ষ্য রাঙামাটিতে নেমেই ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করা এবং পেদাটিংটিং রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া।
আমাদের সঙ্গে নারী বন্ধুরা ছিলেন, তাদের পদভারে রাঙামাটির মাটি কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু তারা সবাই কাঠের পাটাতন বেয়ে স্বচ্ছন্দে উঠে পড়লেন নৌকায়। শুধু আটকে গেলেন শিল্পীবন্ধু গৌতম চক্রবর্তী। তাঁকে তুলতে আমাদের হাত বাড়াতে হলো!
তাঁকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলাম, ঢাকায় ফিরে তিনি রোজ শরীরচর্চা করবেন।
এর মধ্যে আমিও শরীরচর্চা ছেড়ে দিয়েছি। গৌতমদা কি ধরেছেন?

আনিসুল হক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১,৪৩৬ বার পড়া হয়েছে