অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে রাজধানীতে কর্মজীবী কিংবা শিক্ষার্থীরা সাবলেটে বাসা নিয়ে থাকেন। রাজধানীর অনেক এলাকায় সাবলেট দেওয়া হয়- এমন অনেক বাসাই সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে পড়েছে গণ্ডগোলের সুতিকাগার।
অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাজধানীতে অনেক সাব সাবলেট বাসায় গড়ে উঠছে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক, এমনকি চলছে লিভ-টুগেদার। এতে একদিকে পারিবারিক সমস্যা নেমে আসছে, অন্যদিকে বাড়ছে অপরাধ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. রফিক হাওলাদার (৪৫)। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন। সংসারের ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খরচ কমাতে তিন রুমের ফ্ল্যাটের একটি রুম ভাড়া বা সাবলেট দিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। শুধু রফিক নন, তার মতো অনেকই এখন খরচ বাঁচাতে নিজে বাসা ভাড়া নিয়ে আংশিক ভাড়া দেন অর্থাৎ সাবলেট দেন।
সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোতে দেখা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীতে বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সাবলেটের বিজ্ঞাপনও বেড়েছে। আগে কেবল সরকারি কলোনিতে সাবলেটের বিজ্ঞাপন দেখা গেলেও এখন পুরান ঢাকা, পল্টন, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী এলাকায় সাবলেটের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
ব্যয় কমাতে অনেকেই ভাড়া করা বাড়ি/ফ্ল্যাটের তিন-চারটি রুমের একটি সাবলেট দিচ্ছেন। সাবলেটের কারণে ভাড়াটিয়া ও উপভাড়াটিয়া উভয়েই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
কিন্তু এই সাবলেটই অনেক ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাবলেটের কারণে গড়ে উঠছে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক এবং ভেঙে যাচ্ছে সংসার। অনেকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে পারিবারিক আদালতে আবেদন করছেন। সাবলেট পরকিয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে।
রাজধানীর বাড্ডায় গত ২ নভেম্বর সাবলেট ভাড়াটিয়া প্রাইভেটকার চালক জামিল শেখ (ভাড়াটিয়া) ও মেয়ে নুসরাতকে করা হয় হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনাকে এবং সাবলেট থাকা ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাবাকে হত্যা করতে দেখে ফেলায় মায়ের পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খুন হয় ৯ বছরের শিশু নুসরাত জাহান (জিদনী)। ২ নভেম্বর রাতে উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ভাড়া বাসায় নুসরাতকে শ্বাসরোধে ও তার বাবা জামিল শেখকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। জামিলের স্ত্রী আরজিনা ও তার কথিত প্রেমিক শাহীন মল্লিক হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জামিলের সংসার ছেড়ে সাবলেট ভাড়াটিয়া শাহিনের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিলেন আরজিনা। পথের কাঁটা সরাতেই তারা খুন করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাড্ডা থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেন।
রং মিস্ত্রি শাহীন তার স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে নিহত জামিলের ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শাহীনের স্ত্রী মাসুমা ও বন্ধু কোয়াজকেও গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া পরকীয়ার জেরে স্ত্রী শামীমা আক্তার হ্যাপি হত্যায় নিহতের স্বামী মুকুল হোসেন মোল্লা ও পরকীয়া প্রেমিকা লাভলী আক্তার নীলুফাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Domain Registration
Dubai (City tour- Abu Dhabi- Burj Khalifa) 6D/5N
রাশিয়া ভিসা প্রসেসিং (বিজনেসম্যান)
গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান আসামি মুকুল হোসেনের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। আসামি নীলুফা মামলার শুরু থেকেই পলাতক। আসামি মুকুল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার ময়েনদিয়া শেখপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল ওয়াজেদ মোল্লা।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন আলীপুর ইটাভাটা ব্রিজের নিচে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর তিন টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার এসআই গোলাম সারোয়ার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স্ত্রীকে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে আসামি মুকুল ঘটনার পরদিন সাভার থানায় একটি জিডি করেন। ১৩ ও ২০ জানুয়ারি দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। স্ত্রী হত্যার পর আসামি মুকুলের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় হ্যাপির পরিবার পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুকুল স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে ২৮ জানুয়ারি মুকুল স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
মুকুল জবানবন্দিতে বলেন, বিয়ের আগে নীলুফাদের বাসায় সাবলেট থাকার সময় নীলুফার সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নীলুফা তার স্বামীর সঙ্গে দুই মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। এক পর্যায়ে আসামি মুকুল বিয়ে করে একই এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। তখনও তাদের পরকীয়া চলছিল। নীলুফা প্রায়ই মুকুলকে বলতেন বউ নিয়ে তার সামনে ঘোরেন এটা তার ভালো লাগে না। একদিন তিনি দু’জনের একজনকে খুন করবেন।
নীলুফা ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি মুকুলের স্ত্রী লাভলীকে সাথে নিয়ে মুকুলের কারখানায় যান। সেসময় কারখানায় বিদ্যুৎ না থাকায় কর্মচারীদের কেউ ছিল না। কারখানায় ঢুকেই লাভলীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরেন নীলুফা। মুকুল দৌঁড়ে গিয়ে লাভলীর পা মাটির সঙ্গে চেপে ধরেন। শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়।
সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিশ্বাস ও অপ্রীতিকর ঘটনা বেড়েছে। এ কারণে অনেক সময় পরিস্থিতি খুনোখুনির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পরকীয়ায় জড়ানোর পর মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন নিজের সন্তানকেও শত্রু ভাবতে শুরু করে। এর পরই সন্তানকে খুন করে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে বিচার কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতা থেকে বের হতে হবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ ব্যাপারে বলেন, প্রতি বছরই জীবনযাত্রার ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায় ৮.৪৪ ভাগ এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ৭.১৭ ভাগ। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে আর্থিক সংকটের কারণে বর্তমান সময়ে বাসা সাবলেট দিচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, যে কোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)১,২১০ বার পড়া হয়েছে