খানিক আগে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেছে রাঙামাটির ঘন সবুজ পাহাড়ি উপত্যকা। দূর পাহাড়ের মাথার ওপর নেমে এসে আবারও সম্ভবত বৃষ্টি নামানোর পাঁয়তারা করছে মেঘদল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে না জানা বৃক্ষ আর লতাগুল্মের সারি। তারপর আচমকা হোঁচট খেয়ে যেন থেমে গেছে হ্রদের পানি দেখে। ছোট-বড় সবুজ টিলার গা ঘেঁষে দূরে কোথায় মিলিয়ে গেছে পাহাড়বাসী হ্রদ। বৃষ্টির উৎপাতেই বুঝি হালকা মেটে রং ধরেছে তার শরীরে। এককোনায় কয়েক জোড়া নাও বাঁধা। হ্রদের এপাড়ে কিংবা ওপাড়ে। কোথাও কেউ নেই। এসব কিছু থেকে চোখ তুলে ওপরের দিকে তাকালে আবারও আরেক দফা শ্বাসরুদ্ধকর সবুজ দুনিয়া। গম্বুজের সুচালো মাথা উঁকি দিচ্ছে রাশি রাশি সবুজের মাঝখান থেকে।
রাজবাড়ীর সামনের ঢালু রাস্তার মাঝখানটায় থেমে আলোকচিত্রী সুপ্রিয় চাকমা আঙ্গুল তোলেন দূরে-‘ওই যে দেখছেন, ওইটাই রাজবনবিহার। চলেন, আপনাকে ঘুরায়ে আনি।’ তর্জনী তাক করে ঠিক কোন জায়গাটা দেখানোর চেষ্টা করেন সুপ্রিয়, বুঝে উঠতে পারি না ঠিক। আবার মনে মনে ভাবি,’ রাজবনবিহার? সে আবার কী? রাজারা সেই আমলে বন-জঙ্গলে শিকারে-টিকারে বেরোতেন বলে শুনেছি। রাজবনবিহার কি সে রকমই কিছু? সুপ্রিয়র পিছু নেওয়ার আগে পলকের জন্য মনের চোখে পুরোনো দিনকার রাজা-রাজড়াদের কল্পিত ছবি ভাসে।
একটা পাহাড়ের মাথায় আছি আমরা। ওপারের পাহাড়েই রাজবনবিহার। জঙ্গলের পাখিগুলোর মতো ফুড়ুত করে উড়ে যেতে পারলেই বুঝি বেশ হতো। কিন্তু মানুষ হওয়ার হুজ্জত অনেক। তাই আমাদের পাহাড় বেয়ে নামতে হয় নিচে। তারপর সরু লিকলিকে খালটা পেরিয়ে চড়তে হয় পাশের বামুন পাহাড়ের মাথায়।
খিঁচ খিঁচ। খোঁয়াক খোঁয়াক। রাজবনবিহারের সামনের মাঠটায় পদার্পণ করতে না করতেই শাখামৃগদের নিজস্ব ভাষায় সাদর সম্ভাষণ। শব্দের উৎস খুঁজে বের করার আগেই তিড়িং-বিড়িং তিন লাফ দিয়ে সামনের মাঠে নেমে আসে তিন বানর। নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে বেজায় রকমের ঝাপটাঝাপটি শুরু করে তারা। সামনের মাঠেই একদল মনুষ্য সন্তান ক্রিকেট না কী যেন খেলছে, তাদের পেছনে রেখে বানরের কুস্তি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় আমাদের। তবে বিনে পয়সার দর্শক দেখেই সম্ভবত অচিরেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে বানর বাহিনী। আরও একটুখানি খ্যাচর-ম্যাচর আর ঝগড়াঝাঁটি করে ইয়া বড় এক লাফ দিয়ে তারা চড়ে বসে সপ্ত স্বর্গ ভবনের সিঁড়িতে। ততক্ষণে মাঠের কোনার দিকের গাছে আরেক আলোড়ন। কোলে দুধের শিশু নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির মুশকো চেহারার এক মা বানর। পেছনে একপাল সাঙ্গপাঙ্গ। সর্বনাশ! ভুল করে এ কোন বানররাজ্যে এসে পড়লাম।
শাখামৃগ পরিবেশিত লম্ফঝম্প ক্রীড়া উপভোগ শেষে আমরা এগোই রাজবনবিহারের মূল ভবনের দিকে। ততক্ষণে অবশ্য জানা হয়ে গেছে, এই জায়গাটা আসলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। প্রতিবছর কঠিন চীবর দান উৎসব হয় এই রাজবনবিহারেই। ভিক্ষুদের ধ্যান-সাধনার জন্যই নাকি এই বিহারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন রাজারা।
ফিচার বিজ্ঞাপন
মালাওয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ৭দিন ৬রাত
Dubai (City tour- Abu Dhabi tour) 4D/3N
কানাডা ভিসা
রাজবনবিহারের সম্মুখ ভবনের সিঁড়িতে ওঠার আগে জুতো খুলে রাখা নিয়ম। খালি পায়ে আমরা সিঁডি ডিঙিয়ে পা রাখি রাজবনবিহারের মূল প্রাঙ্গণে। এ যেন আরেক দুনিয়া। ঘাসে ঢাকা চত্বরে বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছেন ভিক্ষুরা। সুবিশাল বৌদ্ধ মূর্তির সামনে উপবিষ্ট আছেন কেউ কেউ। ত্রিভুজাকৃতির গম্বুজওয়ালা ভবনগুলোর সামনের একটা জায়গায় আগুন জ্বলছে। বিহার প্রাঙ্গণে এদিক-ওদিক ঘুরঘুর করছিলাম। এর মধ্যেই চোখে পড়ল বানর (নাকি হনুমান?) মূর্তিগুলোর ওপর।
মন্দ কিছু দেখব না
মন্দ কিছু শুনব না-এমন ধারার চার শপথবাক্য (নাকি হিতোপদেশ) নিয়ে চার ভঙ্গিতে সার বেঁধে আছে চার বানর মূর্তি। ডান দিকের চাতালের মাথায় আছে সুবিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি। সামনের চত্বরে উপবিষ্ট কয়েকজন ভিক্ষু। সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই। এই সময়টায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম। কোথাও কেউ উচ্চ স্বরে কথা বলছে না। নাগরিক কোলাহল নেই। হাঁকডাক নেই। সব মিলিয়ে আশ্চর্য এক নীরবতা দাপিয়ে বেড়ায় বিহারের আনাচ-কানাচে।
ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
১,৫৫১ বার পড়া হয়েছে




