আপনি সারা দিন অনেক পরিশ্রম করে এসেছেন ক্লান্ত। সব কাজ শেষ করে বিছানায় এলিয়ে দিলেন শরীর। চোখ বন্ধ করলেন। আর ঘুম ‘নাই হয়ে গেল’। এমনটা কিন্তু অনেকেরই হয়। আবার ধরুন, রাতের বেলা কোথাও একটু খুট করে আওয়াজ হলো। অথবা আওয়াজ হলো বলে মনে হলো। আর আপনার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। নানান দুশ্চিন্তা এসে হানা দিল মাথার ভেতর। অথবা রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রায়ই আপনার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর হয়তো বাথরুমে গেলেন, পানি খেলেন, বাকি রাতে আর ঠিকমতো ঘুম হলো না। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘আনকনসাস ওয়েকফুলনেস’। মানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জেগে থাকা।

এমন সমস্যা অনেকেরই। সাধারণত নারীরাই এমন ঘুমের সমস্যায় বেশি ভোগেন। একটানা ঘুম না হওয়া মোটেও ভালো কথা নয়। এর মারাত্মক সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। হার্টের অসুখসহ হতে পারে নানা জটিলতা। রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের অভাবে কমে আসতে পারে গড় আয়ু। আসুন জেনে নিই, ছোট ছোট কী উদ্যোগ নিলে হতে পারে অবাধ গাঢ় ঘুম।

শব্দহীন ঘরে ঘুমান। ঘুমানোর আগে কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিন আর ছাড়ুন। তাতে শ্বাসপ্রশ্বাসের আর কোনো সমস্যা থাকল না। ফলে রাতে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাঘাতজনিত কারণে ঘুম ভাঙার ব্যাপারটা কমে আসবে।

রাতে ঘুমানোর জন্য দিনের আলো বা রোদে থাকা জরুরি। শরীর যদি আলো, রোদে বোঝে যে এখন দিন, এখন আর আলো নেই, দিন ফুরোল, তাহলে আমাদের ‘দেহঘড়ি’ সে অনুসারে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়।

সাধারণভাবে প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটা, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, মেডিটেশন, ইয়োগা-এগুলো করলে এমনিতেই রাতে গাঢ় ঘুম হয়। কেননা শরীরের সব পেশি তখন ক্লান্ত থাকে। শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনেই সে ভালো ঘুমায়। তবে ঘুমানোর চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে এড্রিনালিন হরমোন নিঃসৃত হবে। আর আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে।

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে। ঘুমের আগে মুঠোফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশনে চোখ না রাখা ভালো। কেননা এখান থেকে যে নীল আলো বের হয়, তা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমের দিকে মনোযোগী হতে বাধা দেয়। হালকা মেজাজের বই পড়া যেতে পারে বা আলো কমিয়ে স্লো মিউজিকও শোনা যেতে পারে। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে খানিক গল্প করা যেতে পারে। ঘুমানোর আগে একটু মেডিটেশনও করতে পারেন। সারা দিনে উল্লেখযোগ্য কী হলো, ডায়েরিতে পাঁচ লাইন লিখেও রাখতে পারেন।

মানসিক উদ্বেগের কারণেও অনেকের রাতে ভালো ঘুম হয় না। আসলে টেনশন ফ্রি জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। আবার টেনশনও প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনের অংশ। তাই টেনশন ম্যানেজ করে চলতে হবে। এ জন্য নিজেকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। ছাদে গাছ থাকলে বিকেলে নিয়মিত বাগানের যত্ন করলে শরীর আর মন দুটোই ভালো থাকবে।

বিকেল চারটার পর থেকে চা, কফি, কোন, স্প্রাইট–জাতীয় ফিজি ড্রিঙ্ক বাদ দিতে হবে। বিছানাকে কেবল ঘুমের জন্যই ব্যবহার করতে হবে। একেবারে খালি পেটে বা একেবারে ভরা পেটে ঘুমাতে যাবেন না। রাতে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে সারতে হবে রাতের খাওয়া। কিছু খাবার আছে, যা খেলে ঘুম ভালো হয়। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেতে পারেন। ঘুমানোর আগ দিয়ে গুরুপাক বা চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। রাতের খাবার যত সহজপাচ্য হয়, তত ভালো।

অসময়ে ঘুমাবেন না। দিনে যদি আপনি দু–তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, রাতে এমনিতেই ঘুম আসবে না। ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও ভালো ঘুম হতে পারে। বিছানাটাকে কেবল ঘুমের জন্যই ব্যবহার করুন। সুস্থ জীবনের জন্য ভালো ঘুম অত্যন্ত জরুরি। সবার ঘুম ভালো হোক। একটা ভালো ঘুম ঝরঝরে সকাল দেয়। আর সেগুলো একটা চমৎকার দিনের অন্যতম পূর্বশর্ত। এমনকি একটা চমৎকার জীবনেরও।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



২৩১ বার পড়া হয়েছে