শিশু ডাক্তারদের কাছে আসা শিশুদের অনেক সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা হলো এডেনয়েড বা এডেনোটনসিলাইটিস। নাক ও মুখের ছিদ্রের মাধ্যমে আমাদের দেহের খাদ্যনালি ও শ্বাসতন্ত্রের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ হয়। তাই নাকের পেছনে ও গলায় কিছু প্রহরী থাকে। এদের একসঙ্গে ওয়েল্ডেয়ার্স রিং বলে। এই ওয়েল্ডেয়ার্স রিংয়ের মধ্যে অন্যতম হলো নাকের পেছনের টনসিল আর গলার পাশের টনসিল। নাকের পেছনের টনসিলকে বলা হয় ন্যাজোফ্যারিঞ্জিয়াল টনসিল। ঘন ঘন সংক্রমণ হয়ে যখন এর গঠনে স্থায়ী পরিবর্তন চলে আসে, তখন একে এডেনয়েড বলা হয়। গলার টনসিল বড় হয়েও সমস্যা করতে পারে, তবে এদের তখন আলাদা কোনো নাম হয় না। একটি শিশুর শুধু এডেনয়েডের সমস্যা হতে পারে আবার টনসিলের সমস্যার সঙ্গে মিলে এডেনোটনসিলাইটিসও হতে পারে। এই লেখায় এডেনয়েড নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। কারণ, শিশুদের এই সমস্যাটি নিয়ে ডাক্তারদের কাছে আসা মা–বাবার দুশ্চিন্তা ডাক্তারদের সত্যি ভাবিয়ে তোলে।
লক্ষণ
এ রোগে প্রথমত শিশুর যে সমস্যা নজরে আসে তা হলো, শিশু ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারে না। রাতে হাঁ করে ঘুমায়, বালিশে লালা পড়ে, নিশ্বাস নিতে খাঁ খাঁ করে শব্দ হয়, খেতে চায় না, প্রায়ই সর্দি-কাশি হয়। এ ছাড়া খেলাধুলার প্রতি শিশুর অনীহা দেখা যায়, নতুন কিছু শিখতে চায় না, পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়। অনেক সময় শিশু কানে কম শোনে। পাশের রুম থেকে ডাকলে সাড়া দেয় না, ক্লাসে পড়া বোঝে না। এ সময় অনেকে শিশুর ওপর বাড়তি চাপ দিয়ে থাকেন। শিশু দুষ্টুমি করে লেখাপড়া করছে না বলে বকাবকি করেন, গায়ে হাত তোলেন। এতে শিশু আরও বিগড়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, শিশুর যে সমস্যা নজরে আসে তা হলো, শিশু প্রায়ই পেটব্যথা বা পা ব্যথার অভিযোগ করে। এটার অনেক কারণ আছে। কিন্তু টনসিল বা এডেনোটনসিলের সমস্যা থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি যে জীবাণুর আক্রমণে টনসিল বা এডেনোটনসিলের সমস্যা হয়, তার নাম বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস। সময়মতো ও উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা না হলে স্বভাবতই শরীর এই জীবাণুর বিপক্ষে একটা প্রতিরোধব্যবস্থা নেয়। কিন্তু সমস্যা হলো সেই প্রতিরোধব্যবস্থা শিশুদের শরীরে হৃৎপিণ্ডের দেয়াল, কিডনির দেয়াল এবং হাঁটুর সংযোগস্থলেও আক্রমণ করে। কিন্তু শিশুরা তাদের সমস্যার কথা ঠিকভাবে বলতে পারে না। তখন তারা শুধু বলে পেটব্যথার কথা, হাঁটুব্যথার কথা। এ জন্য তাদের অনেক যত্ন ও সময় নিয়ে না দেখলে ঠিক বোঝা যায় না মূল সমস্যা কোথায়।
তৃতীয়ত, যে সমস্যাটা হয় সেটা হলো ঘন ঘন কান পাকা। দেখা যায় কিছু কিছু শিশুকে নিয়ে মা–বাবা কয়েক দিন পরপরই কান পাকা রোগের জন্য বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। রোগের ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, শিশু হয়তো ছোট থেকেই কানে হাত দিয়ে চুলকাত, কেউ আমলে নেয়নি ব্যাপারটা। কিংবা একবার দুবার বলেছে কানব্যথার কথা, ব্যথার ওষুধে সেরে গিয়েছে। কিন্তু তারপর আর কোনো খোঁজ না নেওয়ায় একেবারে কান ফেটে পুঁজ বের হয়ে কান পাকা রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে।
চতুর্থত, যে সমস্যা দেখা যায়, শিশু খাবারের ভালো খারাপ, নিজের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উদাসীন হয়ে যায়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, শিশু নাকের ঘন ঘন সংক্রমণের কারণে নাকে ঘ্রাণ পায় না। তাই খাবারের স্বাদ পায় না, খেতে চায় না। নিজের ও আশপাশের ভালোমন্দ ঘ্রাণ পায় না, তাই পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উদাসীন থাকে।
এ রকম আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলোর এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে মা–বাবা আসেন তাঁদের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে।
চিকিৎসা
শিশুকে ভালোভাবে দেখে, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা বোঝার চেষ্টা করেন যে তার এডেনয়েডের সমস্যাটি কি ওষুধে সেরে যাবে, সেটি শুধু কি অ্যালার্জি বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে হয়েছে, নাকি অপারেশন বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন আছে। অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ এবং অপারেশন দুই–ই প্রয়োজন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কেবল কিছুদিন ওষুধ খেলে সেরে যায়।
এডেনয়েড খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস। ডাক্তাররা সাধারণত শিশুকে এক পাশ থেকে মুখ হাঁ করিয়ে এক্স-রে করিয়ে এডেনয়েডের অবস্থা জানতে চেষ্টা করেন। অনেক সময় দেখা যায় নাকের পেছনে বিশাল করে ঢিবি হয়ে আছে এডেনয়েড। কিন্তু বাস্তবে হয়তো সেটা কেবল মাঝবরাবরই আছে। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে শিশুর অন্যান্য সমস্যা কতটুকু আছে, সেটা ভালোভাবে খেয়াল করতে হয়।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Paradise island, Maldives, 4D/3N
ইস্তানবুল, কাপাডোসিয়া ও আন্টালিয়া ৮দিন ৭রাত
Toyota Allion 2014 G Package
আবার অনেকের এক্স-রেতে দেখা যায় এডেনয়েড প্রায় নেই বললেই চলে, কিন্তু শিশুর টনসিলের সমস্যা আছে কিংবা সে কানে ঠিকমতো শুনতে পায় না। সে ক্ষেত্রে তার শ্রবণশক্তির পরীক্ষা করা, কানের ভেতরটা দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব যাচাই করে যদি দেখা যায় এডেনয়েডের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, তবে দেরি না করে দ্রুত অপারেশন করা না হলে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে বা পুরোপুরিভাবে কমে যেতে পারে।
শিশুর মা–বাবা এবং চিকিৎসকের মধ্যে এডেনয়েড নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক শিশুর জীবনে জটিলতা তৈরি হতে দেখেছি। কখনো মা-বাবা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করতে খামখেয়ালিপনা করেন। কখনো শিশু ওষুধ খেতে চায় না। কখনো মা-বাবা অপারেশনের পক্ষে মত দেন না। কখনো মা-বাবা ও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অপারেশনের পক্ষে থাকলেও শিশু বিশেষজ্ঞ আরও কিছুদিন অপারেশন ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধে আস্থা রাখার পক্ষে থাকেন।
তবে মোটাদাগে শিশুর বর্তমান পরিস্থিতি, পরীক্ষা–নিরীক্ষার রিপোর্ট এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা অপারেশনের পক্ষে গেলে দেরি না করে অভিজ্ঞ কারও হাতে অপারেশনে যাওয়া শিশুর সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে। কারণ, দেরিতে অপারেশন করা হলে এডেনয়েড বা এডেনোটনসিলাইটিস থেকে আরোগ্য পাওয়া গেলেও এগুলোর কারণে স্থায়ী কোনো সমস্যা তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
প্রতিটি শিশুই গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কারণে বাতজ্বর, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, পুষ্টিহীনতা, মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে কোনো শিশু বড় হোক এটা কারও কাম্য নয়। তাই মা–বাবা কষ্ট করে হলেও একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক খুঁজে নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রেখে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে উপকৃত হোন। ভালো থাকুক আপনাদের কোলের শিশু।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)৬২৫ বার পড়া হয়েছে




