বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশের শুরুতেই থাকবে সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থার আদলে তৈরি করা বনভূমি। সেখানে থাকবে ওই শ্বাসমূলীয় বনের বৃক্ষ–লতা। সেখানে বেঙ্গল টাইগার ঘুরে বেড়াবে। তার পাশেই থাকবে হরিণ–বানর থেকে শুরু করে সুন্দরবনের হরেক রকমের পাখি। তারপর একে একে আফ্রিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বনভূমি ও বন্য প্রাণী। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাকে এই আদলে ঢেলে সাজাতে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। শুধু ঢাকা নয়, রংপুর চিড়িয়াখানাকেও এমন বিশ্বমানে সাজানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। ১৪ নভেম্বর ২০২১ এ রাজধানীর একটি হোটেলে ওই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি করা ওই পরিকল্পনা দুই দিনের এক কর্মশালার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। ১৫ নভেম্বর কর্মশালার শেষ দিন। মহাপরিকল্পনা তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্বের শতাধিক চিড়িয়াখানার পরিকল্পনাকারী বার্নার্ড হ্যারিসন। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খানকে নিয়ে তাঁরা ওই পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেছেন। প্রস্তাবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ১৫ বছর সময় লাগবে বলা হয়। কিন্তু কর্মশালায় উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।
কর্মশালায় বলা হয়, এশিয়ার সেরা দুই চিড়িয়াখানা সিঙ্গাপুর ও চীনের পিকিং চিড়িয়াখানার আদলে বাংলাদেশের ওই দুই চিড়িয়াখানাকে গড়ে তোলার কাজটি অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। তবে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তা পর্যায়ক্রমে করা হবে। এর চারপাশে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হবে। চিড়িয়াখানাটির প্রতিটি প্রাণীর থাকার জায়গা তার নিজের আদি প্রাকৃতিক পরিবেশের আদলে তৈরি করা হবে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা চিড়িয়াখানা দেখতে দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং কিংবা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যাব না। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা দেখতে। পরিকল্পিতভাবে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে চিড়িয়াখানার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. আবদুল লতীফ। চিড়িয়াখানার মহাপরিকল্পনার রূপরেখা উপস্থাপন করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেডের টিম লিডার ও আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড হ্যারিসন ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান।
রেজা খান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ যেসব চিড়িয়াখানা রয়েছে, সেগুলো উনিশ শতকের ধারণার ওপর তৈরি করা। যেখানে প্রাণীদের খাঁচায় রাখা হবে। আর মানুষ তাদের কাছে গিয়ে দেখবে। কেউবা তাদের ঢিল দিয়ে বা ছুঁয়ে দেখবে। এটি বন্য প্রাণীদের জন্য কোনো সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে না। এখন যে মহাপরিকল্পনাটি করা হয়েছে, তাতে বর্তমানে বিশ্বে প্রাণীদের মর্যাদা এবং সুরক্ষার বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়। এই চিড়িয়াখানায় তা নিশ্চিত করা হবে।’
পরিকল্পনায় আরও বলা হয়, নতুন ওই পরিকল্পনায় চিড়িয়াখানায় হেঁটে পরিদর্শন করা যাবে। আবার বিশেষ ধরনের বাস ও ঝুলন্ত গাড়িতে করে চড়ে বেড়ানো যাবে।
পরিবারসহ সেখানে সারা দিন ভ্রমণ করতে চাইলে তার ব্যবস্থাও করা হবে। সেখানে বন্য প্রাণীদের ব্যাপারে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার ৭৫ একর জায়গা এবং রংপুর চিড়িয়াখানা ১১ একর জায়গার পুরোটার মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে।