সুন্দরবনের পুরোটাই যেন অজানা রূপ-রহস্য আর রোমাঞ্চে ভরা। বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের বাসিন্দা ভয়ঙ্কর সুন্দর বেঙ্গল টাইগার কিংবা বিষধর সাপ শঙ্খচূড়। আরও আছে জলের বাসিন্দা ডলফিন, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ও পাখ-পাখালির দল। বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের গহিনে গিয়ে এর বিচিত্র বাসিন্দার অনেকেরই দেখা পেয়েছেন খসরু চৌধুরী। সেই সব রোমাঞ্চকর গল্পই তিনি শুনিয়েছেন এবারের মূল রচনায়।

১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারির ঝকঝকে রোদেলা দিন। নিউজপ্রিন্ট মিলের দুটি স্পিডবোটে পূর্ব সুন্দরবনের সুপতি চান্দেশ্বর টাইগার পয়েন্ট হয়ে কটকায় ঘণ্টাখানের সময় কাটালাম। কটকা থেকে আবার রওনা দিয়ে শেলারচর হয়ে কালা মিঞার ভারানী হয়ে নীলকমল পৌঁছাব। ভারানী দিয়ে ছোট স্টিমকাটারে ফিরছিলেন শরণখোলার এসিএফ ও তাঁর তরুণী ডাক্তারবধূ। এসিএফ আমাদের থামিয়ে চায়ের নিমন্ত্রণ জানালেন। এসিএফ জানালেন তিন দিন ধরে তিনি ঘুরছেন, কথা বলার লোক পাচ্ছেন না। বেলা ১১টা বাজছে, চা হলে মন্দ হয় না। রুবাইয়াত মনসুর ছিল অন্য বোটে, সে আমাদের বোটে চলে এল। ওদের বোটটি নিউজপ্রিন্ট ক্যাম্পের উদ্দেশে ছেড়ে গেল।
সকালের মধ্যেই আমরা পাঁচটি মাস্ক ফিনফুট, পাঁচটি শূকর, চারটি মদনটাক, সাতটি কুমির, বেশ কয়েকটি হরিণ দেখেছি। সবার মন প্রফুল্ল। চা খাওয়া বাবদ কালা মিঞার ভারানীতে মিনিট বিশেক কাটিয়ে আবার বোট ছাড়লাম। ভারি চমৎকার কালা মিঞার ভারানীর দুই পারের দৃশ্য। দুই পারেই বড় বড় সারিবদ্ধ কেওড়াগাছ, খালের পাড় জুড়ে মালিয়া ঘাসের জঙ্গল। আমার পাশে বসেছিলেন নিউজপ্রিন্ট মিলের গেউয়া অপারেশনের ইনচার্জ দারুজ্জামান, বন বিভাগের আমার সহপাঠী রেঞ্জার, গারট্রুড ডেনজাউ আর রুবাই। অন্য পাশে বসা নিউজপ্রিন্টের তিনজন কর্মী। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমার সহপাঠী জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন, বোটের আওয়াজে কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখি পাড়ে গলা-ডোবানো মালিয়া ঘাসের জঙ্গলে সুন্দরবনের বাঘ দাঁড়িয়ে। স্পিডবোটের চালক ব্রেক করার মতো বোট দাঁড় করিয়ে দিল। কারও মুখে কথা নেই। গারট্রুড, রুবাই আর রেঞ্জার ছবি তোলা শুরু করল। রেঞ্জারের হাতের ক্যামেরাটি পয়েন্ট অ্যান্ড শুট, ওই ক্যামেরায় ৩৫ মিমি লেন্স বসানো। তাতে কী ছবি আসবে, তিনিই জানেন। এমন রোদেলা দিনেও তাঁর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ অন করা। প্রতি ক্লিকে আলোক বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আর বাঘটি অবাক হয়ে সেটা দেখছে। অন্তত মিনিটখানেক বাঘ দাঁড়িয়ে রইল। সম্ভবত খাল পার হবে। সুন্দরবনের সব রূপ, রহস্য, আতঙ্ক, রোমাঞ্চ যেন বাঘের সোনালি দেহে ঠিকরে পড়ছে।
এর আগে এক দিনে কখনো সুন্দরবনে এত প্রাণিবৈচিত্র্য দেখিনি। এত পরিষ্কার নিরাপদে বাঘও দেখিনি। সব দেখার পর মনে হলো, বাঘ দেখতে না পেলে দারুণ অপূর্ণ থেকে যেত আমাদের ভ্রমণ।
সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, পঞ্চগড়ের বনেও একসময় বাঘ দেখা যেত। কিন্তু সুন্দরবনের সঙ্গে বাঘ যতটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, অন্য কোনো বনের সেই সম্পৃক্ততা নেই। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাটের দশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাঘের জঙ্গলের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তাতে দাঁড়িয়েছে-পৃথিবীর মাত্র ১৪টি দেশে কমবেশি এখনো বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। আর কোনো একক বনে এত বাঘ নেই। বর্তমান পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বাঘের অবস্থা খুবই খারাপ। মাত্র চার হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঘ টিকে আছে। সেখানে বাংলাদেশ-ভারতের সুন্দরবনে প্রায় ৫০০ বাঘ বেঁচেবর্তে রয়েছে। একেকটি বাঘের জঙ্গলে যদি দুই শয়ের কম বাঘ থাকে, তবে সেটার জেনেটিক্যালি ভবিষ্যৎ নেই ধরতে হবে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় বাঘের ক্ষেত্রে সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশ-ভারতের নয়, পৃথিবীর অন্যতম সম্পদ। সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ পুরোপুরি উপমহাদেশের হরিণ। পৃথিবীর নানা হরিণ প্রজাতির মধ্যে চিত্রল হরিণ মধ্যম আকৃতির এবং দেখতে সবচেয়ে সুন্দর হিসেবে গণ্য। আমেরিকার টেক্সাসে এ হরিণ ছাড়া হয়েছে। সেখানে এদের সংখ্যা, এদের জন্মভূমি ভারতবর্ষের চেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হয়।

সুন্দরবনের শঙ্কচূড়
সুন্দরবনের শঙ্খচূড় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর সাপ। এ সাপ ভারতের কেরালা থেকে শুরু করে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া হয়ে ফিলিপাইন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘন জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। তবে সুন্দরবনে যেমন নিশ্চিত দেখতে পাওয়া যায়, তেমনটি আর কোথাও দেখা যায় না। শঙ্খচূড় সাধারণত গভীর জঙ্গলের সাপ, এরা মানুষের সান্নিধ্য এড়িয়ে চলে। এই সাপের বিষথলিতে গোখরো সাপের চেয়ে ছয় গুণ বেশি বিষ থাকে। এ সাপকে অনেকে প্রচণ্ড ভয় পায়। বিশাল আকৃতির শক্তিশালী এ সাপ বাংলাদেশে চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। থাইল্যান্ডে রেকর্ড দৈর্ঘেøর সাপ, অর্থাৎ ছয় মিটার পর্যন্ত পাওয়া গেছে। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনের তাম্বুলবুনিয়ায় আমি একবার এই সাপের হাতে পড়তে পড়তে বেঁচে যাই। আমাদের নৌকাটি পারাপারের নৌকা। খোলা নৌকায় ১৫ জন জাপানিসহ আমরা তাম্বুলবুনিয়া খালের দক্ষিণপার ঘেঁষে নৌকা চালাচ্ছিলাম। বন বিভাগের লোকের কাছে শুনেছিলাম এখানে একটি বাঘ সকালের দিকে মাঝেমধ্যে রোদ পোহায়। আমাদের উদ্দেশ্য-ভাগ্য সহায় হলে সেটিকে দেখব। জোয়ারে খালের পাড় ভেসে গেছে। আমরা চলেছি নুইয়ে পড়া হেতাল ঝোপের পাশ দিয়ে জোয়ারের উল্টোদিকে। নদী-খালগুলোর তীরভূমি অমসৃণ হওয়ায় পাড়ের দিকে জলপ্রবাহ বাধা পেয়ে উল্টো স্রোত চলে পাড় ঘেঁষে। সুন্দরবনের মানুষ একে বলে মাগনা জোয়ার। এ মাগনা জোয়ার ধরে আমরা এগোচ্ছি। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি হেতাল ঝোপ অস্বাভাবিক নুইয়ে আছে। যেন গাছগুলো কেউ নিচ থেকে টেনে রেখেছে। কী হতে পারে? ভালো করে তাকিয়েই চিৎকার করে মাঝিকে বললাম, নৌকার মাথা ঘুরিয়ে জলের দিকে নিয়ে যাও। মাঝি ও নৌকার আরোহীরা হকচকিয়ে থমকে গেলে একটা বৈঠা হাতে নিয়ে আমি জলে চাড় দিয়ে নৌকার মাথা ঘুরিয়ে জোয়ারের জলে পড়লাম। নৌকা কিছুটা সরেও গেল জোয়ারের টানে। এবার সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করল, ‘কী দেখলেন?’ বললাম, ‘অপেক্ষা করুন, আপনারাও দেখতে পাবেন।’ জোয়ার ঠেঙিয়ে নোয়ানো হেতালগাছের কাছাকাছি এলে এবার সবাই দেখতে পেলেন। বিরাট এক শঙ্খচূড় হেতালপাতার ওপর পাকানো গা মেলে দিয়ে রোদ পোহাচ্ছে। সঙ্গীরা স্টিল ভিডিওতে ছবি তোলা শুরু করলেন। ছবি আমিও তুললাম। সাপটি আমাদের উপস্থিতিতে উত্ত্যক্ত। তার মাথা দেখতে পাইনি। সাপটি ধীরে ধীরে ঘন ঝোপে হারিয়ে গেল। আমাদের ধারণা ছিল, তীব্র শীতে সাপ তার ঘাঁটি ছেড়ে বের হয় না; শীতনিদ্রায় থাকে। পরে দেখেছি, বড় সরীসৃপ-যেমন কুমির, গুঁইসাপ, বড় কেউটে, অজগর, শঙ্খচূড়দের শরীরে সূর্যতাপ সংগ্রহ করে কর্মক্ষম হতে হয়। এ সময় তাদের কিছু পরিমাণ খাওয়াদাওয়া করতে হয়। তাই চড়া রোদে এরা সজাগ হয়।
ছবি তোলার সময় শঙ্খচূড়ের মাথা দেখতে পাইনি। পরে ছবি প্রিন্ট হয়ে এলে ছবির কোনায় মাথা দেখতে পাই। আমরা সাবধান না হলে হয়তো নোয়ানো হেতাল ঝোপের তলায় উপস্থিত হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এর আগে বা পরে বেশ কয়েকবার শঙ্খচূড় দেখেছি বেশির ভাগ খাল পার হওয়ার সময়। কখনোই এদের মেজাজি মনে হয়নি। অথচ সুন্দরবনের বনচারীরা এদের দারুণ ভয় পায়। কাউকে শঙ্খচূড় কামড় দিয়েছে শুনতে পাইনি। হয়তো ফণাধারী বিরাট সাপ বলে ভয়ঙ্কর মনে হয়।
ওজনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইথন সুন্দরবনে পাওয়া যায়। সংখ্যায় অত্যন্ত কম। মাত্র একবার দেখেছি। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ লিজার্ড-স্থানীয় নাম গুঁইঘোড়েল বা তারখেল সুন্দরবনের প্রায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়।
কুমিরের ৩৬ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ইন্দোপ্যাসিফিক খাঁড়ির কুমির। এদের মানুষ ধরার প্রবণতাও আছে। এ কুমিরের কয়েকটি সুন্দরবনে এখনো বেঁচে আছে। এদের দু-একটি শিকারিদের এড়িয়ে এখনো টিকে আছে, যেগুলোর আকার দুঃস্বপ্নে দেখা অতিকায় ডাইনোসরের মতো। বছরে দু-একজন জেলে এদের পেটে গেলেও উৎপাত বেশি দেখা যায় সারওয়াকের জঙ্গলে ও ফিজি দ্বীপপুঞ্জে। সুন্দরবনের কমান্ডারের চর, শাপলা খাল, ভদ্রা নদীর মোহনায় শীতকালে এদের দেখা পাওয়া যায়-ভাটায় চরে উঠে রোদে গা এলিয়ে দিয়েছে।

জলদুনিয়ার বাসিন্দারা
সুন্দরবনের নদীনালায় রয়েছে চার প্রজাতির দুর্লভ ডলফিন। গাঙ্গেয় শুশুকের সঙ্গে ইরাবতী ডলফিন, পরপয়েস ও ইন্দোপ্যাসিফিক হামব্যাক ডলফিন (গোলাপি ডলফিন) আর বাইরের সাগরে আছে স্পিনার ডলফিন, ব্রাইডি তিমি ও ফিন তিমি। পৃথিবীর খুব কম প্রতিবেশগত বাসভূমি এর সমকক্ষ অথবা সমৃদ্ধ।
সুন্দরবনের কিছু পাখি এখনো দেখতে পাওয়া যায়, যেটা সমগ্র পৃথিবীতে বিপন্ন। এদের মধ্যে মাস্ক ফিনফুট অন্যতম। পাখিটি পাতিহাঁসের আকারের, গ্রিবজাতীয় পাখি। বনের ছোট কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। দেখতে দারুণ সুন্দর! পূর্ব সুন্দরবনেই এদের প্রধানত দেখতে পাওয়া যায়। ম্যানগ্রোভ হুইসলারও বিলুপ্তপ্রায়। চড়ুই আকৃতির গায়কপাখিটি সুন্দরবনের সর্বত্র দেখা যায়। অন্যান্য পাখির মধ্যে ম্যানগ্রোভ পিটা, প্যালসস ফিসিং ইগল, গোলাপি মাছরাঙা, গলিয়াথ হেরনসহ কয়েকটি বিপন্ন পাখি মাঝেমধ্যে সুন্দরবনে দেখতে পাওয়া যায়। সরীসৃপদের মধ্যে বাটগুর কাছিম, কালচিতি সাপ, হোয়াইট বেলিড ম্যানগ্রোভ স্মেক বিশ্বব্যাপী বিপন্ন। মাঝেমধ্যে সুন্দরবনে এদের দেখতে পাওয়া যায়। ৬০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে থাকা বিছে জাতীয় রাজকাঁকড়া সুন্দরবনের চরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। আরও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় সবুজ ব্যাঙ।
সুন্দরবন ক্রো নামে বাদামি-কালোর ওপর সাদা ফুটকি দেওয়া একটি প্রজাপতি সুন্দরবনের একমাত্র এনডেমিক স্পিসিস।
সুন্দরবনের গাছের মধ্যে সুন্দরী, মটগরান, গুরাল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায়।

ফিচার বিজ্ঞাপন

মৈনট ঘাট প্রাইভেট ডে লং ট্যুর

মূল্য: ৯০০ টাকা জন প্রতি

অদেখা সুন্দরবন
সুন্দরবনের নিসর্গসুন্দর এলাকার মধ্যে আমাদের জানাশোনা শুধু কটকা-কচিখালী, হিরন পয়েন্টে সীমাবদ্ধ। অথচ সুন্দরবনে অনেক সুন্দর এলাকা রয়েছে, যেগুলো ভয়াল সুন্দর, অনাবিষ্কৃত। এলাকাগুলো হচ্ছে কোলার চর, টিয়ার চর, চানমিঞাখালী, কোকিলমুনি, তিনকোনা, চরানুটিয়া, গেওয়াখালী, পাটকোষ্টা, ভ্রমরখালী, কুকুমারী খাল, কালীর চর, ঝালিয়া, মাদারবাড়িয়া, বেয়ালা কয়লা, দোবেকী প্রভৃতি এলাকা। এলাকাগুলোয় নিরাপত্তা ও পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সামান্য উন্নতি ঘটালে পর্যটকদের মাধ্যমে যে রাজস্ব আয় হবে, তাতে সুন্দরবনের জন্য সরকারি ব্যয়ভার অনেক কমে যাবে।
সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত এর প্রতি মমতা জাগবে না। আমাদের দক্ষিণবঙ্গের বিশাল জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎসব সুন্দরবন। সুন্দরবনের গোলপাতা, গরান না হলে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও ঘর উঠবে না। সুন্দরী কাঠ না হলে নৌকা তৈরি হবে না। সুন্দরবনের আশপাশের জমি একফসলি। এই জমি এক বছরে যে ধান উৎপাদন করত, তাতে দক্ষিণবঙ্গের সাংবাৎসরিক খোরাকির ধান হয়ে যেত। এখন চিংড়ি চাষ করায় অধিকাংশ ধানি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। ২০০৭ সালের সিডর, এ বছরের আইলায় প্রমাণিত হয়েছে সুন্দরবন না থাকলে দক্ষিণের জনপদ ধুয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত। সুন্দরবনের সম্পদরাশি সম্পর্কে জানতে হলে সুন্দরবন যেতে হবে। দু-একবারে হবে না, বারবার যেতে হবে। মনে পড়ে, প্রথম দিকে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল চোরাই শিকারিদের সঙ্গে বনে যাওয়া, নয়তো দলেবলে লঞ্চ ভাড়া করে যাওয়া। এখন কয়েকটি প্যাকেজ ট্যুর প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সপরিবারে সুন্দরবন যাওয়া সহজ, প্রায় নিরাপদ হয়েছে। তবে প্যাকেজ ট্যুর একটি নির্দিষ্ট পথে যাতায়াত করে। সুন্দরবন সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে হলে নিজেরা ট্রলার ভাড়া করে বনে যাওয়া ভালো। সঙ্গে অবশ্যই বনপ্রহরী ও অভিজ্ঞ গাইড থাকতে হবে। শুধু বন ও জীবজন্তু দেখে এলে সুন্দরবনের অনেকটাই বাদ পড়ে যায়। আপনাকে সুন্দরবন এলাকার মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
খুলনা থেকে আংটিহারার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে ভোরে। এ বোটে চড়ে কেরানির সঙ্গে নিজের কেবিন বন্দোবস্ত করে নেবেন। বোট নানা জায়গায় ভিড়বে, লোকজন উঠবে-নামবে। এদের সঙ্গে আলাপ করলে বনের অনেক তথ্য জানতে পারবেন। এ ছাড়া নীলকমল, নীলডুমুর, মদিনাবাদের লঞ্চে উঠেও যেতে পারেন। সঙ্গে দু-একজন সঙ্গী থাকলে ভালো হবে। সুন্দরবনের মানুষ অতিথিপরায়ণ। তাদের বিশ্বাস করুন; ঠকবেন না।

খসরু চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনুন

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনু...



১,৪৭৭ বার পড়া হয়েছে