বিশ্বের অন্যতম সমুদ্রতীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বৈচিত্র্যময় প্রাণিকুল নিয়ে আমাদের এ বন। বাংলাদেশের আনাচকানাচ থেকে পর্যটক আসেন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের উপস্থিতি এখানে কম নয়। নৌযান ছাড়া সুন্দরবনে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুন্দরবন ভ্রমণ অনেক ব্যয়বহুল। তাই বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা করেছে সুন্দরবন ভ্রমণের। খরচও কম হয়, অনেকের সঙ্গে নতুন পরিচয় হয় ভ্রমণের সময়। সুন্দরবন যাত্রার অন্তত এক সপ্তাহ আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বন বিভাগ থেকে যাত্রার অনুমতি নিতে হয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় আপনি কোনো ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্তত ১৫ দিন আগে আপনার যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলে।

সুন্দরবনের বেশির ভাগ ট্যুর শুরু হয় খুলনা থেকে। তবে ইদানীং ঢাকা থেকেও কিছু ট্যুর শুরু হচ্ছে। ঢাকা থেকে যাত্রার সুবিধা হচ্ছে, আপনাকে আলাদা করে বাসে খুলনা যেতে হচ্ছে না, বরং ঢাকা থেকেই জাহাজে যাত্রা শুরু করা যায়। সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারেন সুন্দরবন। সাধারণত ৩ দিন ২ রাতের কিংবা ৪ দিন ৩ রাতের ভ্রমণ প্যাকেজ হয়। ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বা তার অধিক খরচ হয় সুন্দরবনে ঘোরার জন্য। তাতে আপনি পাবেন ৩ বেলা রকমারি খাবার, সঙ্গে ২ বার হালকা নাশতা। একেকটি লঞ্চের ধারণক্ষমতা একেক রকম। লঞ্চের যত বেশি ধারণক্ষমতা, তত খরচ কম পড়ে। বিলাসবহুল লঞ্চ রয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণে। তবে পকেটের টাকা খসবে বেশি। আপনি ৫-৭ জনের দল নিয়ে যেতে পারেন আবার চাইলে পুরো জাহাজ ভাড়া করেও যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট ভ্রমণ তারিখে আপনাকে জাহাজে উঠতে হবে শিমুলিয়া ঘাট থেকে। আর খুলনা থেকে ভ্রমণের জন্য লঞ্চে উঠতে হবে খুলনার বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চঘাট অথবা জেলখানা ঘাট থেকে। আপনাকে ট্যুর অপারেটর জানিয়ে দেবে সময় ও স্থান। সকালে জেলখানা ঘাট থেকে লঞ্চে উঠলে মধ্যাহ্নভোজ হবে মোংলা বন্দরে। এরপর পশুর নদ ধরে মূলত সুন্দরবন যাত্রা। যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর প্রথম ফরেস্ট স্টেশন করমজল চোখে পড়বে। কিন্তু সেখানে আপনার লঞ্চ থামবে না। দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে রাতে যেখানে আপনার লঞ্চ নোঙর করবে, সেখানে আপনি কিছুই দেখবেন না। রাতে আর কীভাবে দেখবেন বলুন? লঞ্চের আলো হালকা নদীর পানি পেরিয়ে বনের গাছে পড়লেও তা আপনার কাছে দুর্বোধ্য লাগবে। তবে আপনার ভ্রমণ গাইডের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেবেন, ‘আমরা কটকা এসেছি।’

লঞ্চের জেনারেটরের শব্দে আপনি কিছুটা সচকিত থাকবেন, না হলে সুন্দরবনের নীরবতা আপনাকে রবীন্দ্রনাথ বানিয়ে ফেলবে। রাতে খাওয়ার আগে হয়তো আপনাকে গাইড গিটার বাজিয়ে গান শোনাতে পারেন। এমন যদি হয়, তাঁর সঙ্গে গলা মেলাতে ভুলবেন না। সঙ্গে যদি আরও তিনজন থাকে, তবে রাতে খাবারের শেষে ঘুমের আগে খাতা-কলম নিয়ে একদফা কল–ব্রিজ খেলতে পারেন। কারণ, আপনার প্রিয় মুঠোফোনে নেট পাবেন না। ওহ! বলতে ভুলে গেছি, সুন্দরবনে মোবাইলের নেট পাওয়া যায় না। তাই লঞ্চটা বাদে আপনি থাকবেন সম্পূর্ণ যন্ত্রবিহীন। দৈনন্দিন সব ঝামেলা আপনি দিনের বেলায় হারবাড়িয়া পর্যন্ত রেখে এসেছেন। এবার ঘুমোতে যান, ভোরে উঠতে হবে।

ভোর হলো দোর খোল খুকুমণি ওঠো রে—এমনটাই মনে হবে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে যখন আপনাকে গাইড ডেকে ওঠাবেন। কোনো রকমে ব্রাশ করেই আপনি ছুটবেন কটকায় টাইগার পয়েন্ট, অফিস পার দেখতে। ভোরে উঠতে হলো বলে একটু বিরক্ত হবেন, কিন্তু চিত্রাহরিণের পাল দেখে মনে হবে, এমন দৃশ্য দেখতে আপনি প্রতিদিন ভোরে উঠতে রাজি। কখনো কখনো হয়তো বনের হরিণ আপনার কাছে চলে আসবে আর আপনি আহ্লাদে আটখানা হবেন। সারা দিন হরিণ দেখলে হবে?

সকালে খাওয়া হয়নি তো। তাই আবার লঞ্চে ছুটবেন নাশতা করতে। না বিশ্রাম পাবেন না। নাশতা শেষে আবার ছুটবেন জামতলা সি বিচ দেখতে। লঞ্চের পেছনে বাঁধা ট্রলার আপনাকে যেখানে পৌঁছে দেবে, সেখান থেকে আপনি হাঁটবেন দু–আড়াই কিলোমিটার। মাঝে একটা বড় ফাঁকা মাঠ। যদি নীরবে হাঁটেন, হয়তো দেখবেন সামনে বিশাল হরিণের পাল। সে হরিণ কিন্তু আহ্লাদ দেখায় না। আপনাকে দেখামাত্র ভয়ে বিশাল বিশাল লাফ দিয়ে পালাবে। এরপর হাঁটছেন তো হাঁটছেন, যেন পথ ফুরাতে চায় না। গাইড অবশ্য আপনাকে একটা আপেল আর এক বোতল পানি দিয়েছিলেন। যখন দিয়েছিলেন, তখন বোঝেননি কেন দিলেন। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে তার প্রয়োজনীয়তা আপনার কাছে স্পষ্ট হবে।

জঙ্গল পেরিয়ে জামতলা সি বিচ, এখানকার সৌন্দর্য আপনার এ লম্বা পথ হাঁটার কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। সমুদ্রের গর্জনে প্রথম আপনার শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিলেও বেলাভূমি আর গর্জন ধীরে ধীরে আপনাকে গ্রাস করবে। ফিরতেই চাইবেন না সেখান থেকে। কিন্তু গাইড আপনাকে তাড়া দিয়ে নিয়ে যাবেন। তখন গাইডকে আপনার ভিলেন মনে হবে। তাঁরই–বা দোষ কী বলুন। সময় আর আপনার সুরক্ষার দিকে তাঁর প্রধান নজর। ফিরে আবার লঞ্চের যাত্রা শুরু। যখন লঞ্চ থামল, আবার সেই রাত। প্রশ্ন করলে গাইড আপনাকে বলবেন, ‘আমরা তিন কোনা আইল্যান্ডে আছি।’

যথারীতি আবার ভোরে ওঠা। এবার সমুদ্রে আপনার লঞ্চ চলছে পুরোদমে। বড় বড় ঢেউ পেরিয়ে আপনার লঞ্চ যখন দুবলার চরে, তখন আপনার নাশতা করা শেষ। লঞ্চের ট্রলারে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে দুবলার চরে। শীতের এ সময় পাঁচ মাস জেলেরা ঘর বাঁধেন এখানে। একটা গ্রামে পরিণত হয় দুবলার চর। মাছ ধরে তা শুঁটকি করা হয় এখানে। প্রথমে শুঁটকির কটু গন্ধ লাগলেও কিছুক্ষণ পর সয়ে যাবে। জেলেদের কর্মকাণ্ড আর জীবনযাত্রা উপভোগ করবেন। বেলাভূমিতে লাল কাঁকড়া দূর থেকে দেখবেন, কাছে গেলে উধাও।

এখানে সমুদ্রে ডুব দিতে পারেন। অতএব মনে করে গোসলের কাপড় নিয়ে আসবেন লঞ্চ থেকে। এরপর আবার লঞ্চে ফিরবেন। সমুদ্রের মধ্য দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে হিরণ পয়েন্টে। লাইফ জ্যাকেট পরে আবার নেমে পড়ুন ট্রলারে। হিরণ পয়েন্টে দেখার বা উপভোগ করার তেমন কিছু না থাকলেও লঞ্চ থেকে ট্রলারের ভ্রমণের সময়টুকু আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। হিরণ পয়েন্ট দেখা শেষে আবার লঞ্চে দীর্ঘ পথ, দীর্ঘ সময় যাত্রা। এ দীর্ঘ সময়ে একটি উপন্যাসের ২৩৫ পাতা পড়ে শেষ করতে পারেন, গান শুনতে পারেন, প্রিয়জনের কথা ভাবতে পারেন।

তবে আমি বলি কী, বাইরে তাকিয়ে থাকুন। গাঙচিল দেখুন। একেকটি চিলের এলাকা কতটুকু দেখুন। আকাশ আর মেঘের কানাকানি দেখুন। ঢেউ দেখুন। আর তখন হাতে থাকুক লাল চায়ের কাপ। লালিমা মাখা সূর্যাস্ত সুন্দরবনের সব থেকে বিখ্যাত। এমন সূর্যাস্ত আগে যে দেখেননি, তা আমি হলফ করে বলতে পারি।

তৃতীয় দিন সকালে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে করমজল। সেখানে আপনাকে স্বাগত জানাবে বানর। তাদের থেকে একটু সাবধান থাকাই ভালো। বনে যদি পশু–পাখি দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে, তা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে করমজলে। হরিণ, কুমির আটকে রাখা হয়েছে করমজল ইকো ট্যুরিজমে। করমজল দেখা শেষে আবার লঞ্চ খুলনার উদ্দেশে রওনা দেবে।

আপনারা ভাবতে পারেন, বাঘের কথা কেন বললাম না। নভেম্বর থেকে বগুড়ার একটি আলোকচিত্রীর দল সুন্দরবনে অবস্থান করছে। তারা এখনো বাঘের দেখা পায়নি। তাই আপনি দেখবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তারপরও যদি দেখেন, ভিডিও করে ফেসবুকে দিলে আমরা সবাই দেখে নেব। অনলাইনে সবচেয়ে সহজে সুন্দরবন ট্যুর বুক করে ফেলতে পারেন অনলাইন ট্রাভেল কোম্পানি ‘গো যায়ান’-এ।

Source: Prothomalo

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...



২৬৬ বার পড়া হয়েছে