শৌখিন নগরবাসীর জন্য এই সময়ের আকর্ষণ স্মার্ট বাড়ি বা স্মার্ট হোম। এটা এমন বাসস্থানকে বোঝায়,  যেটির ঠান্ডা–গরম (হিটিং–কুলিং), আলো, নিরাপত্তা বা বিনোদনের যন্ত্রপাতিকে তারহীন (ওয়্যারলেস) সংযোগে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঘরে বা বাইরে যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরের কাজ যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে, আপনার স্মার্ট যন্ত্রগুলোও স্বতন্ত্রভাবে চলতে পারে।

স্মার্ট হোম ধারণার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। স্কটল্যান্ডের পিকো ইলেকট্রনিকস ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্র আর বাতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘এক্স টেন’ নামের এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। আশির দশকে গতি শনাক্তকারী গেট, স্বয়ংক্রিয় গ্যারেজ দরজা আর আবাসিক নিরাপত্তা যন্ত্রের আবির্ভাব স্মার্ট হোমের পরিধিকে সমৃদ্ধ করে।

ইন্টারনেটের বিস্তার এক যন্ত্রের সঙ্গে অন্য যন্ত্রের সংযোগ সহজ করে দেয়। ফলে স্মার্ট হোমের যাত্রায় তা এক নতুন ধারা উন্মোচন করে। এ জন্যই স্মার্ট হোমের সঙ্গে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ (আইওটি) ধারণার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। নিত্যদিন ব্যবহারের যেসব যন্ত্রে ইন্টারনেট সংযোগ, মাইক্রোপ্রসেসর আর সফটওয়্যার থাকে, সেগুলোই  আইওটি প্রযুক্তির মধ্যে পড়ে।বিজ্ঞাপন

ধরুন, একটা স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ঘর মোছার ক্ষমতাকে সেটির সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করে। ভবিষ্যতে যদি সফটওয়্যার পরিবর্তন করে সেটা থেকে উন্নত মানের সেবা পাওয়া যায়, তবে মালিকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সেটি কাজ করবে। অনেকটা সফটওয়্যারের স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদের মতো। আইওটির আরেক সুবিধা হচ্ছে, এক বাসায় একাধিক আইওটি যন্ত্র থাকলে সেগুলো একটি আরেকটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। যেমন স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট একই নেটওয়ার্কে থাকা স্মার্ট এসির (এয়ারকন্ডিশনার) সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে এসির তাপমাত্রার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

বাসায় সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) বা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরা বসিয়ে মুঠোফোন থেকেই সিসিটিভির আওতায় থাকা জায়গার পুরোটা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) সাহায্যে ক্যামেরায় অপরিচিত ব্যক্তির উপস্থিতিও শনাক্ত করা যায়। ফলে বাড়ির নিরাপত্তাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি হিকভিশন আর ডাহুয়ার ক্যামেরা বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ব্র্যান্ডগুলো বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ), মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার (এলিফ্যান্ট রোড) আর বিসিএস কম্পিউটার সিটির (আগারগাঁও) বিভিন্ন দোকানে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। বাসার নিরাপত্তার জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার ভেতরেই মানসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা ক্রয় করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে আলাদাভাবে কোএক্সিয়াল কেবল (প্রতি মিটারে দাম পড়বে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা) আর একটা ডিভিআর (সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) কিনতে হবে। ডিভিআরে সংযুক্ত ক্যামেরার দৃশ্য ভিডিও আকারে সঞ্চিত হয়। কেবলের পরিমাণ নির্ভর করে ডিভিআর থেকে ক্যামেরার দূরত্বের ওপর। সাধারণ ফ্ল্যাট বাড়িতে (১ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফুট) ডিভিআর থেকে গড়ে ৫০ মিটার দূরত্বে তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে আপনাকে ১৬ হাজার ৫০০ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।

ফিচার বিজ্ঞাপন

USA Visa (for Businessman)

মূল্য: 5,000 Taka

সরবাটা ঘি ২৫০ গ্রাম

মূল্য: ৩৩০ টাকা

USA Visa (Private Job Holder)

মূল্য: 5,000 Taka

ফিলিপস, শাওমি আর ন্যানোলিফের মতো স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম ঘরে চলমান গান বা ছায়াছবির শব্দের সঙ্গে আলোর রং পরিবর্তন করতে পারে। এ ছাড়া আপনি মুঠোফোনে নির্দিষ্টভাবে আলোর রং নির্ধারণ করতে পারেন। এটি আপনার তালির আওয়াজে আলো জ্বালাতে ও নেভাতে পারে। স্মার্টলাইফ, পেঙ্গুইন ডটকম এসব জায়গা থেকে থেকে দুই হাজার টাকায় এক জোড়া বাতি কিনে আপনি আপনার ঘরকে স্বীয় রুচিতে সমৃদ্ধ করতে পারেন।  

স্মার্ট টেলিভিশনে আপনি উচ্চ রেজল্যুশনে নেটফ্লিক্স, আমাজন আর ডিজনির পরিবেশনা দেখতে পারছেন। আধুনিক স্মার্টটিভিতে এর পাশাপাশি ইউটিউব ও ওয়েবসাইট দেখা, গেম খেলা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রোগ্রাম রেকর্ড করা যাচ্ছে। গুগল হোম, আমাজন অ্যালেক্সা আর অ্যাপেলের সিরি ভার্চ্যুয়াল সহকারী হিসেবে ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে। কণ্ঠচালিত এ যন্ত্রগুলো আপনার আদেশ বুঝে কাজ করতে পারে। দারাজ, স্মার্টলাইফ, পেঙ্গুইনসহ বিভিন্ন অনলাইন দোকানে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি এখনো আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি।

সতর্কতা

স্মার্ট হোমের বহু সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। স্মার্ট যন্ত্রে ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আপনার ঘরের যেকোনো যন্ত্র হ্যাক করে দুর্বৃত্তরা আপনার মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত, অর্থ-সম্পদ, এমনকি আপনার পরিচয় পর্যন্ত চুরি করতে পারে। আপনার স্মার্ট যন্ত্রগুলো যদি অস্বাভাবিক ধীরগতিতে কাজ করা শুরু করে, বুঝবেন, আপনি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাই স্মার্ট যন্ত্র স্থাপন করার আগে বাসার ওয়াইফাই কানেকশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর দায়িত্বশীলভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করার অভ্যাস রাখতে হবে।

স্ট্যাটিস্টার গবেষণায় ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১০ কোটির বেশি বাড়িকে স্মার্ট হোমের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই গবেষণায় ধারণা করা হচ্ছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি স্মার্ট হোম থাকবে। আর সেখানে থাকবে বাংলাদেশের বেশ কিছু বাড়ি। প্রযুক্তিময় ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় নিদর্শন স্মার্ট হোম। সেই স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ দূরে নয়। ইতিমধ্যে অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের বাজার আর ঘরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে স্মার্ট হোম প্রযুক্তি।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



২৭০ বার পড়া হয়েছে