প্রতিযোগিতাহীন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে, অবশ্যই ইউনিক বিজনেস আইডিয়া দিয়ে শুরু করতে হবে। ইউনিক বিজনেস আইডিয়াগুলো সাধারণত গতানুগতিক বিজনেস আইডিয়া একটু আলাদা হয়ে থাকে।

এখন অনেক ছেলে মেয়েই চায়, পড়াশুনা শেষ করে একটা ব্যবসা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে। কিন্তু, অনেকসময়ই বুঝে উঠতে পারেনা, কি দিয়ে শুরু করবে, কিভাবে শুরু করবে বা আইডিয়াটা কেমন হবে। অন্যকে দেখে বা জিজ্ঞেস করে পুরনো, সেই ছকে বাধা আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও, সেটি টেকসই হয়না তেমন।

পুরনো আইডিয়া অনেকসময়ই ক্রেতার আকর্ষণ এর কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারেনা, ফলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হয়। অনেকে আবার এসব সাত-পাঁচ ভেবে ব্যবসায়ের দিকে মনোযোগীই হয়না। দিনের পর দিন চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে থাকে।

নিচের আলোচনায় এমন কিছু ইউনিক বিজনেস আইডিয়া নিয়ে কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তুলনামূলক নতুন কিন্তু যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

১. খাদ্য পুনঃব্যবহার

রেস্টুরেন্ট, বিয়ে বাড়ি, এমনকি বাসা বাড়িতে প্রতিদিন প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। অন্যদিকে, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রচুর মানুষ না খেয়ে রাত্রিযাপন করে। বেঁচে যাওয়া এই খাবারগুলো যদি সেসব অভুক্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে, কিছু মানুষের উপকার হয়।

আবার আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্য অপচয়ের হাত থেকে বেঁচে যায়। এই কাজ সেচ্ছাসেবী-রূপে করা যায়, আবার খুব অল্প মূল্যের বিনিময়েও করা সম্ভব।

যেভাবেই করা হোক না কেন, মাথায় রাখতে হবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া এই ব্যবসার উদ্দেশ্য নয়। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠান এই ভাবনাটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এটাও বেশ ইউনিক বিজনেস আইডিয়া।

২. বেবি ড্রেস রিসাইকেল

সাধারণত বাচ্চারা খুব দ্রুত বেড়ে উঠে। একটা জামা কেনার পর ৬/৭ মাসের মধ্যেই তা ছোট হয়ে যায়। এভাবে আলমারিতে বাচ্চাদের কাপড়ের বোঝা বাড়তে থাকে যার মধ্যে এমন পোশাক থাকাও অস্বাভাবিক নয় যেটা একদমই পরা হয়নি। অন্যদিকে বাজারে বাচ্চাদের পোশাকের দামও বেশি থাকে।

নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা চাইলেও তাদের সন্তানদের ভালো মানের পোশাক পরাতে পারেনা। একটা প্রতিষ্ঠানের বিনিময়ে এই ধরনের কেনা বেচাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। মানবিক দৃষ্টিতে দেখলে এটা মানবিক এবং ইউনিক বিজনেস আইডিয়া।

৩. পোশা-প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণ

আমাদের মধ্যে অনেকেই বিড়াল, কুকুর, পাখি ইত্যাদি পুষে থাকেন। সারাবছর এগুলো নিয়ে সমস্যা না হলেও, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় হলেই পড়তে হয় বিপাকে। কোথায় এই প্রিয় পশু, পাখি রেখে যাওয়া যায়? আছে কি বিশ্বস্ত জায়গা?

আপনার নতুন ব্যবসাটি হতে পারে এমন একটা বিশ্বস্তের জায়গা। আর আপনাকে হতে হবে পশু পাখির প্রতি মানবিক গুণে ভরপুর। তাহলেই সফলতা ধরা দিবে।

৪. মাঝবয়সীদের মানসিক সহায়তা কেন্দ্র

দেশে কিশোর কিশোরীদের, কিংবা দম্পতিদের জন্য বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও বয়সের মাঝামাঝিতে আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই।চাকরির মাঝামাঝিতে চলে আসা, প্রমোশনের সুযোগ কমে যাওয়া, ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে হঠাৎ একা ফিল করা এবং আরও কিছু শারীরিক পরিবর্তনের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এই চল্লিশোর্ধ মানুষগুলোর। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র এই বয়সীদের কথা মাথায় রেখেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা যায়।

৫. ফুড কোর্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই যদি একটা ফুড কোর্ট করা যায়, যেটা চালাবে ক’জন ছাত্র মিলে নিজেরাই! কেমন হবে বিষয়টি? হ্যাঁ, তাহলে তো কথাই নেই, সবাই বিশ্বস্ততার সাথে পণ্যটি গ্রহণ করবে। ছাত্ররা ঘুরে ঘুরে ক্লাসের ফাঁকে দোকানটি দেখা শোনা করবে, ছাত্রাবস্থায় ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Hanoi, Halong, Halong Bay Cruise 5D/4N

মূল্য: 32,900 Taka

Moscow & St.Petersburg 5D/4N

মূল্য: 114,000 Taka

৬. কনটেন্ট রাইটার

ভাষাগত দক্ষতা যাদের ভালো তাদের জন্য সুন্দর একটা কাজের সুযোগ ‘কনটেন্ট রাইটার’। আপনি চাইলে ইংরেজি বা বাংলা যেকোনো কনটেন্ট লিখতে পারেন। কিছুদিন কারো অধীনে কাজ করে নিজেই শুরু করতে পারেন কনটেন্ট রাইটিং এর ব্যবসা।

তাতে করে কাজের পরিধির ব্যাপারে যেমন জ্ঞান বাড়বে, তেমনি অন্যদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারবেন। একজন ভালো রাইটার এর চাহিদা কিন্তু পুরো পৃথিবী জুড়ে। চাইলে একজন ভালো রাইটার একাই কিংবা আরও কয়েকজনের মাধ্যমে দেশি বিদেশি ক্লায়েন্ট এর কাজ করে দিতে পারেন।

৭. রিভিউয়ার অথবা টেস্টার

যদিও আমাদের দেশে এখনো একজন রিভিউয়ার বা টেস্টার এর প্রফেশনাল বা ব্যবসায়িক পরিচয়টা খুব একটা পোক্ত হয়নি, কিন্তু সামনের দিনগুলোতে এর চাহিদা ব্যাপক। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য এখন অনেকাংশেই সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর।

তবে হাতে ধরে পরখ করে পণ্য কেনা যায়না বলে অনেকের কাছে অনলাইন ব্যবসা তেমন বিশ্বস্ত না। এ অবস্থায় একজন ভালো রিভিউয়ার বা পণ্যের টেস্টার ক্রেতাকে অনেকাংশে নিরাপদ বোধ দিতে পারে। রিভিউয়ার বা টেস্টার নিজে পণ্যটি ব্যবহার করবেন এবং তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

৮. ট্রাভেল কনসালটেন্ট

যাদের ট্রাভেলিং এর ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে, তারা চাইলেই নিজেদেরকে একজন ট্রাভেল কনসালটেন্ট হিসেবে দেখতে পারেন। কোন স্থানের কি বৈশিষ্ট্য, থাকা খাওয়ার সুবিধাদি কেমন, যাতায়াতের ধরন ও খরচ, কোন বিশেষ প্রোগ্রামের আয়োজন আছে কিনা কোনো বিশেষ দিনে ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত মূলত জানতে চাওয়া হয় একজন ট্রাভেল কনসালটেন্ট এর কাছ থেকে। অফলাইনে নিজের একটা ছোট্ট অফিস খুলে অথবা অনলাইনে এই সেবা দেয়া যেতে পার।

৯. অনলাইন ফিটনেস কোচ

আমরা এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। কিন্তু সারাদিন সংসার সামলিয়ে কিংবা অফিসে সময় দিয়ে অনেকের পক্ষেই ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া সম্ভব হয়না। কিন্তু অনলাইনেই, বিশেষত, ইউটিউবেই যদি পাওয়া যায়

  • কার জন্য কেমন ব্যায়াম।
  • কোন ব্যায়ামে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেমন।
  • কিংবা কোন ব্যায়াম আপনার বাড়তি মেদ কতটা ঝেড়ে ফেলবে।

তাহলে তো আর কথাই নেই। এর পাশাপাশি আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর যোগান দিতে পারেন, তাহলে সেবা গ্রহণকারীকে কোথাও ছুটতে হবেনা চাহিদা মতো খাবারের জন্য।

১০. ট্রান্সলেটর

আগের চেয়ে বর্তমানে ভাষান্তরিত বইয়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে। প্রাঞ্জল শব্দের ব্যবহার ও বিন্যাস সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান থাকলে যে কেউ এই কাজগুলো সফলতার সাথে সমাধা করতে পারবে।

তাছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্প সময়ের জন্য ভাষান্তর এর উপর ট্রেনিং দিয়ে থাকে। এমন কিছু কোর্স বা ট্রেনিং করা থাকলে এসব কাজ থেকে ভালো আয় করাও সম্ভব।

শেষ কথা

সব ব্যবসা যে মুনাফা অর্জনের জন্য হবে তা কিন্তু নয়, সামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করেও আজকাল অনেকে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এসব ব্যবসা থেকে যে মুনাফা আসে তা পরবর্তীতে আবার একই ব্যবসার প্রসারেই ব্যবহার হয়।

উপরের আলোচনায় এই দুই ধরনের ব্যবসাকে মাথায় রেখেই আইডিয়া দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ে সফলতা অর্জনে একটা ভালো আইডিয়া শুধুমাত্র একটি প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামক মাত্র। একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, শক্তিশালী নেতৃত্ব, এবং দিন শেষে ভুলগুলিকে সংশোধনই একটি ব্যবসাকে সফলতা এনে দিতে পারে।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১৭২ বার পড়া হয়েছে