এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের যাত্রা শুরু হয়েছে। ঢাকা নগর পরিবহনের অধীন থাকা বাসগুলোয় টিকিট ছাড়া উঠা যায় না। এই বাসগুলো যত্রতত্র থামে না। নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বাসে উঠতে হয়।
দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নতুন ৩টি রুটের মধ্যে ২২ নম্বর রুটে ৫০টি, ২৩ নম্বর রুটে ১০০টি ও ২৬ নম্বর রুটে ৫০টি বাস নামানো হবে। এই তিন রুটের সব বাসই হবে নতুন। তিনটি রুটে যাত্রী ছাউনী, বাস বে ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানিয়েছে, ২২ নম্বর রুটটি হলো—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কাকরাইল, ফকিরাপুল, মতিঝিল, টিকাটুলি, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কোনাপাড়া হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত।
২৩ নম্বর রুট হচ্ছে—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড পর্যন্ত।
আর ২৬ নম্বর রুট হলো—ঘাটারচর থেকে বছিলা, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী মোড়, চাঁনখারপুল, পোস্তগোলা হয়ে কদমতলী পর্যন্ত।
ঢাকার গণপরিবহনের মালিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর ঢাকা ও আশপাশে ২০০-এর বেশি পথে (রুট) বাস চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত হন ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এ ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া।
সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির অধীন। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন। নতুন তিনটি রুটে বাস চালুর বিষয়ে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের আরও বলেন, তিনটি রুটে বাস চালু করতে তাঁরা ১ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১ সেপ্টেম্বর তিনটি রুটে বাস চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সম্মতি দিলে তাঁরা বাস চালু করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ তাপস।
একই অনুষ্ঠানে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর ভেতরে থাকা মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদে আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে ঢাকার বাইরে নির্মাণ করার জন্য দুই সিটি করপোরেশন ডিপিপি তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দিবে।
রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী রুট পারমিটবিহীন ১ হাজার ৬৪০টি বাস জব্দ করতে আগামী ১৭ থেকে ২৮ জুলাই যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে পার্কিং করে রাখা গাড়ির বিরুদ্ধে ১ জুলাই থেকে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন তিনি।
রুট পারমিটবিহীন বাসগুলো পদ্মা সেতু হয়ে যেতে পারবে না বলেও জানান আতিকুল ইসলাম। ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে ৫০টি বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহন পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর বর্তমানে ওই রুটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০টি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।
এই রুটে ১০০টি বাস নামানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও উল্টো বাসের সংখ্যা কমেছে। এমন বাস্তবতায় নতুন তিনটি রুটে বাস নামানো চ্যালেঞ্জিং হবে কি না, এ বিষয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাসগুলো দিতে পারছে না। আশা করি দ্রুত তারা সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
এই রুটে ওই প্রতিষ্ঠানটি আরও নতুন ২০টি বাস নামানোর কথা ছিল। তাদেরকে এখন আর অনুমোদন দেওয়া হবে না। এই রুটে অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০টি নতুন বাস নামানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই বাসগুলো এই যাত্রাপথে যুক্ত হবে।