অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ড। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনভুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর শুধু কাগুজে মর্যাদা পরিবর্তন হয়েছে। নগর এলাকার সেবা বলতেই কিছু পাচ্ছেন না এসব এলাকার ২০ লাখ বাসিন্দা।

জলাবদ্ধতা নিরসন ও মশক নিধনের ব্যবস্থা নেই। নগর উপযোগী সড়ক, সড়কবাতি, ড্রেন, ফুটপাত নেই। ডিএনসিসির আওতাভুক্ত হওয়ার পর উন্নয়নের আশ্বাস, প্রকল্প অনুমোদনের কথা শুনলেও বাস্তবে কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কাউন্সিলররা।

ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, ঢাকা জেলার সাবেক ৮ ইউনিয়ন-দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, হরিরামপুর, বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ এবং ডুমনি ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এসব এলাকায় উন্নয়নের ন্যূনতম ছোঁয়া লাগেনি। বরং দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে থাকলে স্বাভাবিক যে উন্নয়ন হতো, তাও বন্ধ হয়ে গেছে নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর। ভাঙাচোরা রাস্তা, বৃষ্টিতে হাঁটুসমান পানি হয়ে এলাকা ডুবে যাওয়া, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ওয়ার্ডগুলো।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। সেখান থেকে ৯৭ কোটি টাকা গত অর্থবছরে ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তা দিয়ে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে ওই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি বলেন, নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে ‘অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান’ করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা অনুমোদন পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ওই এলাকার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার বছর আগে আটটি ইউনিয়ন পরিষদকে ১৮টি ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করে ডিএনসিসিভুক্ত করা হয়। কয়েকজন মেয়র ও প্যানেল মেয়র পরিবর্তন হলেও ওইসব এলাকার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। উন্নয়ন, সেবার মান বৃদ্ধি এবং দুর্ভোগ দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে না পারায় নির্বাচিত কাউন্সিলররাও পড়েছেন বেকায়দায়। জলাবদ্ধতা দূর করতে পারছেন না; ড্রেনের স্ল্যাব ভেঙে গেলেও অনেক সময় নিজের পকেটের টাকা দিয়ে তা ঠিক করছেন তারা। সম্প্রতি ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা জানান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হলেও কোনো সেবা দিতে পারছি না আমরা। এ কারণে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা নানারকম কথা বলছেন। তাই ফেসবুক লাইভ করেছি। আমাদের (ডিএনসিসির) মেয়র অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি চেষ্টা করছেন। একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। করোনার কারণে অর্থ ছাড় হচ্ছে না, তবে শিগগিরই হবে বলে শুনেছি। তিনি বলেন, মেয়রকে আমি বলেছি অন্য কিছু চাই না, শুধু এলাকার উন্নয়ন চাই। তিনি আমার ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বস্ত করেছেন এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। আমরা তার ওপর আস্থা রেখেছি।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Australia Visa for Lawyer

মূল্য: 20,000 Taka

Thimpu-Paro 4D/3N

মূল্য: ১৫,৯০০ টাকা

Maldives (Paradise Island-Beach Vila & Hulhumale) 3D/2N

মূল্য: ৩২,৯০০ টাকা

ডিএনসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর বলেন, ডিএনসিসিভুক্ত হওয়ার পর আমার ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। সুপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না হলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে না। এছাড়া সড়ক, ফুটপাত, সড়কবাতি এবং অন্যান্য নাগরিক সেবা নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জানা যায়, ডিএনসিসি ১৮ ওয়ার্ড কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হলেও অঞ্চলগুলোর কোনো অফিস নেই। নেই পর্যাপ্ত জনবল। এক অঞ্চলের জনবল আরেক অঞ্চলের বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে। কয়েকটি অঞ্চলে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা অন্য অঞ্চলের অফিসে বসছেন। অঞ্চল-৯-এর কোনো নাগরিকের জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স বা অন্য কোনো সেবার প্রয়োজন হলে তাকে মহাখালীতে অঞ্চল-৩ এর অফিসে আসতে হয়। উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং তুরাগের নাগরিকদের কোনো সেবার প্রয়োজন হলে তাকে উত্তরার অঞ্চল-১-এর অফিসে যেতে হয়।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ মে সচিবালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ঢাকার আশপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ১৬টি ইউনিয়ন দুই সিটিতে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। আবার ওয়ার্ডগুলোকে দশটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে ডিএনসিসির আওতাভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ড বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নের সেবা নিশ্চিত করতে ৫ আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। একইভাবে ডিএসসিসির শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ১৮টি ওয়ার্ডের সেবা নিশ্চিত করতে ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়েছে। ডিএসসিসির নতুন এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করলেও বিপরীত চিত্র ডিএনসিসিতে।

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে গত বছরের ১৪ জুলাই ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। জুলাই ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদকাল। ইতোমধ্যে এক বছর অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু করতে পারেনি ডিএনসিসি। তবে আগামী অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উন্নয়ন কাজ শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী ডিএনসিসি।

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
whatsapp sharing button
linkedin sharing button

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১৭৯ বার পড়া হয়েছে