৫০ বছরে শিশুস্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাংলাদেশের অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। দেশে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। স্বাধীনতার সময় শিশুমৃত্যুর হার ছিল ১৪১, এখন তা ২১। অর্থাৎ, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৮৫ শতাংশ।
স্বাধীনতা অর্জনের ফলে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষের আর্থসামাজিক অগ্রগতি কী হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক ও গবেষণা চলছে। স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি-অর্জন সেই আলোচনা, বিতর্ক, গবেষণার বাইরে তো নয়ই; বরং কেন্দ্রেই আছে।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতার সময়ে মূল জোর ছিল প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ওপর। ওই সময় হাম, নিউমোনিয়া, টিটেনাস, ডিফথেরিয়ায় বহু শিশুর মৃত্যু হতো। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ফলে এসব রোগে মৃত্যু কমে আসতে থাকে। ডায়রিয়ায় অনেক শিশু মারা যেত। স্যালাইনের ব্যাপক ব্যবহার ডায়রিয়ায় মৃত্যু কমায়। অপুষ্টিও শিশুমৃত্যুর কারণ ছিল। পুষ্টি কর্মসূচি পরিস্থিতির উন্নতি করে।
স্বাধীনতার পর থেকেই মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, শিশুপুষ্টি—এসব বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশের সংবিধানে, বিভিন্ন সময়ে নেওয়া পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যনীতি এবং সর্বশেষ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচিতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। গত ৫০ বছরে ধারাবাহিকভাবে এসব কাজ হয়ে এসেছে।
নবজাতক (০-২৮ দিন), শিশু (৩৬৫ দিন) এবং পাঁচ বছর বয়সী (৪ বছর ৩৬৫ দিন) শিশু—সব ধরনের শিশুমৃত্যু বাংলাদেশে কমেছে। তবে শিশুমৃত্যুর হার বোঝানোর ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী শিশু শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন, শিশুপুষ্টি সূচকের আলোচনায় পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের কথাই ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত শিশুমৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে এক বছর বয়সী শিশু বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ১৯৭২ সালে এক হাজার শিশু জন্ম নেওয়ার পর ১৪১টি শিশু মারা যেত বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে। আর এখন মারা যায় ২১টি শিশু। পাকিস্তানে এখন শিশুমৃত্যুর হার ৫৫। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বছরে পাকিস্তানে শিশুমৃত্যুর হার বাংলাদেশের চেয়ে কম ছিল। সংখ্যাটি ছিল ১৩৯।
স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারী শিক্ষার প্রসারসহ আরও কিছু বিষয় শিশুস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১৯৯০ সাল থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নবজাতক, শিশু ও পাঁচ বছর বয়সীদের, অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে মৃত্যুহার কমেছে। তবে নবজাতকের সুরক্ষায় কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো আছে।
শিশুর জীবন রক্ষায় ১৯৭৮ সালে দেশে শুরু হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এই কর্মসূচি লাখ লাখ শিশুকে প্রতিবন্ধিতা ও অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা করেছে। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ থেকে পোলিও নির্মূল হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি স্বাস্থ্য খাতের একটি বিরাট অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে ইপিআইয়ের কারণে।
ইপিআইয়ের আওতায় এখন শিশুদের বিসিজি, ডিফথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হুপিং কাশি, হাম ও রুবেলা, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয়।
ফিচার বিজ্ঞাপন
ভুঁড়ি কমান, সুস্থ থাকুন
বাংকক-ক্রাবি-সাফারি ওয়ার্ল্ড ৫দিন ৪ রাত
৩০০ফিট ও জিন্দা পার্ক প্রাইভেট ডে লং ট্যুর
জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও সমন্বিত শিশু রোগ ব্যবস্থাপনার (আইএমসিআই) আওতায় নবজাতকের নাভিতে ক্লোরহেক্সিডিন (৭.১%) দেওয়া হয়, দেশের প্রায় অর্ধশত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে স্কানু (স্পেশাল কেয়ার নিউ বর্ন ইউনিট) চালু আছে, দেশের প্রায় সব কটি জেলায় হেল্পিং বেবিস ব্রেথ (এইচবিবি) কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, প্রায় ১০০টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ চালু করা হয়েছে। এসব কাজ ঠিকমতো করার জন্য কার্যকর রেফারেল পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চিকিৎসক ও নার্সদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ চলমান আছে, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবক তৈরির উদ্যোগ আছে, ওষুধসহ অন্যান্য সরঞ্জামের সরবরাহ নিয়মিত অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ৫৯টি জেলা হাসপাতালে এবং সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের সমন্বিত চিকিৎসাসেবা ও পুষ্টি সেবা কর্নার আছে। পাশাপাশি এসব শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সেবার পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে তথ্য জানানোরও উদ্যোগ সরকারের আছে।
শিশুস্বাস্থ্যের এই উন্নতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মাঠকর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও তাদের মাঠকর্মী। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও গবেষকেরা শিশুমৃত্যু রোধে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশে যেসব সফল উদ্যোগ দেখেছেন বা উদ্যোগ সম্পর্কে জেনেছেন, তা বাংলাদেশে ব্যবহার বা প্রয়োগ করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এর পাশাপাশি আছে বাংলাদেশের মানুষের শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় সৃজনশীল উদ্যোগ, আছে নতুন উদ্ভাবন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ও তথ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি, জনবল–সংকট দূর করার পাশাপাশি সেবার মানের উন্নতি করলে দেশে শিশুস্বাস্থ্যের আরও উন্নতি হবে, শিশুমৃত্যু আরও কমে আসবে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত আয়োজন এখানে অপেক্ষা করছেপূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত ...
১৩৯ বার পড়া হয়েছে