পরিচ্ছন্ন নয়নাভিরাম প্রকৃতির এক অনন্য নৈসর্গিক নিদর্শন রাঙ্গামাটি। প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও ঝরনার সমন্বয়ে এক অনন্য সৃষ্টি রাঙ্গামাটি জেলা। রাঙ্গামাটি শহরটিও বেশ পরিচ্ছন্ন পরিপাটি। ঢাকার কল্যাণপুর ও সায়দাবাদ থেকে বেশ কিছু এসি ও নন এসি বাস যায় রাঙ্গামাটি শহরে। বাস থেকে রাঙ্গামাটি শহরের দোয়েল চত্বরে নেমে অনেকগুলো হোটেলের মাঝে একটি হোটেলে উঠি।

পরদিন রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। দোয়ল চত্বর থেকে প্রথমেই গেলাম রাঙ্গামাটি পর্যটনে ঝুলন্ত ব্রিজ দেখতে। ঝুলন্ত ব্রিজ রাঙ্গামাটির বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট। এটা রাঙ্গামাটির প্রতীক হিসেবেও সুপরিচিত।

ঝুলন্ত ব্রিজে উঠতেই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম পরিবেশ দেখতে চোখ জুড়িয়ে যাবে। হ্রদের পানির মাঝে ছোট ছোট পাহাড়। বিকাল বেলার দৃশ্য আরো চমত্কার। ব্রিজের ওপার থেকে ট্রলার ভাড়া করে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ট্রলারে চড়ে হ্রদের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। পানির মাঝে ছোট টিলা পাহাড় যেন এক চমত্কার নৈসর্গিক দৃশ্য। কাপ্তাই হ্রদের মাঝ থেকেই দেখা যায় বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্পট। একটি স্পটে প্রবেশ করলাম পলওয়েল পার্ক। অসাধারণ এক দর্শনীয় স্থান পলওয়েল পার্ক। এখানে পাহাড়ের ওপর ছোট বড় কটেজ রয়েছে কয়েকটি। রয়েছে কটেজের পাশে আকর্ষণীয় সুইমিং পুল। কৃত্রিম ঝরনা। পাহাড়ের ওপর মিষ্টি কুমড়োর আকৃতির চটপটি ফুচকার দোকান, রেস্তোরাঁ। এখানের রয়েছে একটি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত ব্রিজ। স্পটের তিন পাশে লেক। মাঝে বিশাল মাঠ, মাঠের একপাশে উঁচু স্থানে বিশাল হলরুম ও রেস্তোরাঁ। এই স্পটের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বাংলাদেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট ‘লাভ লক’ নির্মিত হয়।

লাভ লকের একটি করুণ ইতিহাস রয়েছে। আমেরিকান প্রবাসী আলাউদ্দিন তার স্ত্রী লিমাকে নিয়ে ২০১৪ সালে ১৯ মার্চ বেড়াতে আসেন কাপ্তাই হ্রদে। ট্রলারে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাত্ ঝড়ে ট্রলারটি ভয়ংকরভাবে দুলে উঠলে লিমা ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। তাকে বাঁচাতে আলাউদ্দিনও ঝাঁপিয়ে পড়েন পানিতে। তারপর তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর ২২ মার্চ তাদের লাশ পাওয়া যায় দুজনকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় হ্রদের এই তীরে। মৃত্যুর পরেও তারা ভালোবাসা থেকে পৃথক হয়নি। ঠিক যে স্থানে তাদের লাশ পাওয়া যায় তার পাশেই রাঙ্গামাটি পলওয়েল পার্কে এই লাভ পয়েন্ট ‘লাভ লক’ স্থাপন করা হয়।

এখানে প্রেমিকযুগল বেড়াতে এসে তাদের নিজেদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ আলাউদ্দিন-লিমার চিরন্তন ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে এই লাভ আকৃতিতে একটি করে লাভ লক ঝুলিয়ে যান। এখানে কয়েক শত লক ঝুলানো আছে। পলওয়েল পার্কটি অসাধারণ একটি পিকনিক স্পট ও দর্শনীয় স্থান। রাঙ্গামাটির শুভলং ঝরনাটিও বেশ আকর্ষণীয়। তবে এর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বর্ষার মোসুমে যেতে হবে। ১৪০ ফুট ওপর থেকে ঝরনার পানি কাপ্তাই হ্রদে এসে মিশে। বাংলাদেশের অন্যন্য ঝরনার মতো বর্ষার মৌসুমে এই ঝরনাটির প্রকৃত সৌন্দর্য ধরা দেয়। ঝরনার পানি স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও মন শীতল হয়ে যায়।

ট্রলারে করেই যাওয়া যাবে শুভলং ঝরনা দেখতে। রাঙ্গামাটি শহর থেকে শুভলংয়ের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। কাপ্তাই লেকের আঁঁকাবাকা পথের এবং দুই পাশের পাহাড়ের নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে শুভলং ঝরনা দেখতে যাওয়া মানে এক অপার সৌন্দর্য উপভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া, যা যে কোনো পর্যটককে আকর্ষণ করবে দারুণভাবে। রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার হতে দুই ঘণ্টার পথ শুভলং যেতে।

তারপর রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার এবং রাজবাড়ি ও অনিন্দ্য সুন্দর ঐতিহাসিক স্থান। রাজবন বিহার বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহাসিক বৃহত্তম বিহার। রাজবন বিহারটি দেখতেও ভীষণ মনোমুগ্ধকর। প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কঠিন চিবুক দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Dubai (City Tour) 4D/3N

মূল্য: 12,900 Taka

Paradise island, Maldives, 4D/3N

মূল্য: ৯১,৯০০ টাকা জনপ্রতি

Singapore Tour with Universal Studio 4D/3N

মূল্য: ২৬,৯০০ টাকা

সেখানে পাহাড়ের ওপর চাকমা রাজার রাজবাড়িটিও দেখতে ভীষণ মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয়। রাজবন বিহার ও রাজবাড়ির মাঝখানে হ্রদ বয়ে যায়। রাজবাড়িতে রাজ দরবার, কাচারিসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজ স্থাপনা আছে। সুখবর এই যে, রাজবাড়ি দেখতে দর্শনার্থীদের কোনো টিকিট লাগে না। সবার জন্য উন্মুক্ত।

রাজবন বিহারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে আছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর, যা দর্শনার্থীদের ভীষণ আনন্দ দেবে।

কাপ্তাই নেভি পার্ক ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান : রাঙ্গামাটি শহর থেকে কাপ্তাই নেভি পার্কে সিএনজি করে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। যেতে যেতে তুড়োমন পাহাড় আরণ্যক, ক্যান্টনমেন্ট, কাপ্তাই তাপ বিদ্যুেকন্দ্র পথে পড়বে। সিএনজি রিজার্ভ করে নিলে পথে পথে দর্শনীয় স্থান ঘুরেও দেখতে পারেন। রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় পাহাড় তুড়োমন পাহাড়। কাপ্তাই নেভি পার্ক যেতেই পড়বে। দুই পাশে পাহাড় আর আঁকাবাঁকা পথে যেতে দারুণ এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

কাপ্তাই নেভি পার্ক চমত্কার একটি দর্শনীয় স্থান যেখানে সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার পর পুরো নিচের লেক ও চারপাশের দৃশ্যটি দেখতে অসাধারণ। এতটাই মনোমুগ্ধকর যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আরো বেশ কিছু দেখার মতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। রাঙ্গামাটি জেলাটি সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। রাঙ্গামাটি শহরটিও বেশ পরিচ্ছন্ন, মানুষগুলোও আন্তরিক। রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কাউকে চরমভাবে আকৃষ্ট করবে, প্রকৃতির এক স্বর্গীয় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করবে।

Source: Ittefaq

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



৩১২ বার পড়া হয়েছে