ডায়াবেটিসের চিকিৎসাসংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার একদল বিজ্ঞানী অনেক দিন থেকেই গ্লুকাগন-লাইক পেপটাইড-১ (জিএলপি-১) নামের একটি হরমোন নিয়ে গবেষণা করছেন। এ গবেষণা দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ট্রান্সপোর্টেশন, কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত হয়। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কলোরায়ার তরুণ গবেষক শাতিল শাহরিয়ার। তাঁদের গবেষণার মূল লক্ষ্য, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের এমন কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা, যা ইনজেকশনের মাধ্যমে না দিয়ে মুখে খাওয়ার বড়ি বা ক্যাপসুলের মতো সেবন করা যায়। এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করা, যা খুব অল্প মাত্রায় দীর্ঘদিন কাজ করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং তাঁদের মধ্যে ৮০ ভাগ রোগী অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করেন। এ ৮০ শতাংশ মানুষের অর্ধেকই ডায়াবেটিসের নিয়মিত চিকিৎসা নিতে পারেন না।
শাতিল শাহরিয়ার প্রথমে আলোকে বলেন, তাঁরা গবেষণায় নতুন ‘ড্রাগ মলিকুল’ নিয়ে কাজ করার পরিবর্তে জিন থেরাপিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সাধারণভাবে একটি ওষুধ রক্তে যতটুকু মাত্রায় প্রবেশ করে, ঠিক ততটুকুই কাজ করতে পারে। কিন্তু জিএলপি-১ হরমোন শরীরের কোষগুলো থেকে প্রয়োজনমতো প্রতিষেধক তৈরি করে।
সম্প্রতি শাতিল শাহরিয়ারদের গবেষণাপত্রটি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানভিত্তিক মাসিক গবেষণা ম্যাগাজিন ‘ন্যানো লেটার্স’-এ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, গবেষক দলটি জিন থেরাপি ও ন্যানোটেকনোলজির সমন্বয়ে ডায়াবেটিসের এমন একটি প্রতিষেধক তৈরি করেছে, যেটা একবার মুখে সেবনে মানুষের শরীরে এক মাসের বেশি সময় ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এ গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এ প্রতিষেধক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বহুল ব্যবহৃত ইনসুলিনের চেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর হবে।
ইনসুলিনের মতো দিনে একাধিকবার ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে না। মাসে এক ডোজ নিলেই চলবে।
শাতিল শাহরিয়ার বলেন, একজন সুস্থ মানুষের রক্তে যেভাবে ইনসুলিন তৈরি হয় এবং কাজ করে, এ ওষুধও একইভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাই বারবার ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
‘ন্যানো লেটার্স’–এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রের তথ্যমতে, স্বল্পমাত্রার এ ওষুধ ইনসুলিন তৈরি বা দীর্ঘ মেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণই শুধু করে না, বরং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যায়ে আছে এমন রোগীদেরও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, যকৃৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ ডায়াবেটিসের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
জিএলপি-১ হরমোনের এ মৌখিক ডোজ মাত্র একবার সেবনে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের মাধ্যমে বারবার ক্ষুধা বা পিপাসা লাগা এবং বারবার খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমার পাশাপাশি খাবার গ্রহণে পরিপূর্ণতা ও তৃপ্তি বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এ ছাড়া শরীরের মেদ ও চর্বি কমানোর মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে ওজন বৃদ্ধিতে লাগাম টানে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Cairo, Alexandria & Sharm El Sheikh 6D/5N
Dubai (City tour- Dhow Cruise- Desert safari- Abu Dhabi tour) 5D/4N
বালি-লম্বক-গিলি আইল্যান্ড ৭দিন ৬ রাত
রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপসহ অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে ধ্বংস করে ডায়াবেটিস রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এ ওষুধ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম বলে গবেষকেরা দাবি করেন।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, মানবশরীরের ডায়াবেটিস রোগের অনুরূপ ডায়াবেটিস জিনগতভাবে প্রতিস্থাপিত তিনটি পৃথক জাতের একাধিক ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে প্রিক্লিনিক্যালের সব পর্যায়ে সাফল্য আসে। পরে মানবদেহের সঙ্গে ৯৩ শতাংশ ডিএনএ মিল আছে, এমন বানরের ওপর গবেষণায় সফলতা পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকেরা।
সম্প্রতি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কোষের জিএলপি-১ রিসেপ্টর সক্রিয় করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমন দুটি প্রতিষেধক ট্রুলিসিটি ও ট্যানজিয়ামকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
শাতিল শাহরিয়ারদের গবেষণা বলছে, প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে জিএলপি১ আমেরিকার এফডিএ কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিষেধক ট্রুলিসিটির ইনজেকশনের চেয়ে সাত গুণ বেশি কার্যকর বলে দেখা গেছে। কারণ, একবার সেবনে ডায়াবেটিক বানরে জিএলপি১ কমপক্ষে ১৪ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ট্রুলিসিটি বানরের শরীরে স্থির থাকে দুই দিন।
গবেষকদের দাবি, জিএলপি১ মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এক মাস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ইঁদুর, বানর ও মানবদেহের বিভিন্ন কোষের ওপর গবেষণা করে জানা গেছে, এ ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হবে।
শাতিল শাহরিয়ার প্রথম আলোকে জানান, তাদের গবেষণায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) কর্তৃক স্বীকৃত। তাদের নতুন ফর্মুলেশনের ওষুধটিও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য এএফডিএ–এর কাছে আবেদন করা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এফডিএ অনুমোদন দিলে মানবদেহে এই ফর্মুলেশনের ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে।
-প্রথম আলো থেকে নেয়া।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
৩২২ বার পড়া হয়েছে