রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ভাড়াটিয়া। বাসা ভাড়া করেই বসবাস করেন। কিন্তু তারা সব সময় থাকেন যেন বাড়ির মালিকের অধীন। পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। তার চেয়েও বড় বিপদ প্রতিবছর বাসাভাড়া বৃদ্ধি। এবার নতুন বছর শুরুর আগেই বেশিরভাগ বাসা ও ফ্লাটের মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ক্যালেন্ডারের হিসেবে নতুন বছর শুরুর আগে রাজধানীতে শুরু হয় বাড়িভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা। নতুন বছর থেকে মালিকরা ‘ইচ্ছেমতো’ বাড়িয়ে দেন ভাড়া। এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারা যেন নিরুপায়। আয়ের সিংহভাগ খরচ করে তারা এ নগরে থাকেন কেবল জীবিকার তাগিদে।
নতুন বছরে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার চিন্তায় বাসিন্দাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়ছে, এর সঙ্গে বাড়িভাড়া বেড়ে গেলে এ শহরে থাকাই দায় হয়ে যাবে। অন্যদিকে বাড়ির মালিকদের যুক্তি, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে ভাড়াটিয়াদের আয় বাড়ছে। সে কারণেই নতুন বছরে তারা ভাড়া বাড়াতে যাচ্ছেন।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বাড়ার হার প্রায় দ্বিগুণ।
সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়িভাড়া পরিশোধে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা অবস্থান ১১তম। কিন্তু আয়তন ও জনসংখ্যার হিসাবে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। প্রতি বছর রাজধানীতে ৬ লাখ ১২ হাজার নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এক দিনের হিসাবে এক হাজার ৭০০ জন।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Dubai (City tour- Dhow cruise- Desert safari) 4D/3N
US Student Visa
Moscow, Novosibirsk & Irkutsk 7D/6N
রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন খলিলুর রহমান নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, বেতনের সিংহভাগ চলে যায় বাড়িভাড়া পরিশোধে। তুলনামূলক একটু কম ভাড়ায় পাব বলে অফিস থেকে অনেক দূরে বাসা নিয়েছি। তবুও প্রতিবছর ভাড়া নিয়মিত বাড়ছে। নতুন বছর সামনে রেখে বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, করোনার জন্য এ বছর ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এ কারণে নতুন বছরে ভাড়া আরো এক হাজার টাকা বাড়বে। চার সদস্যের পরিবারে ১৫ হাজার টাকা বাড়িভাড়া হলেও গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলসহ প্রায় ১৮ হাজার টাকা পড়ে যায়। বেতনের টাকায় বাড়িভাড়া, সংসার খরচ, বাচ্চার খরচ চালিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। নতুন বছরে বাড়িভাড়া আরও এক হাজার টাকা বাড়ানো হবে বলে মালিক জানিয়ে দিয়েছেন। অফিস, সন্তানের স্কুল এদিকে। তাই অন্য কোথাও গিয়ে বাসা নেয়া একটু কঠিন।
শনির আখড়ায় জুয়েল নামের এক ভাড়াটিয়া বলেন, ৩০ হাজার টাকা বেতন পাই, এর মধ্যে ১৬ হাজার টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধে চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা, সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। মাস শেষে ধার-দেনা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে যদি আবার এক হাজার টাকা ভাড়া বাড়ে, তাহলে বিপদ বাড়বে। হয়ত বাসা পরিবর্তন করে আরো ভেতরের দিকে চলে যেতে হবে, নাহলে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।
খিলগাঁও এলাকায় ১৪ হাজার টাকা নিট ভাড়ায় দুই রুমের একটি বাসায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হোসেন আলী। তিনি বলেন, ১৪ হাজার টাকা বাড়িভাড়া হলেও গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলসহ প্রায় ১৭ হাজার টাকা পড়ে যায়। বেতনের টাকায় বাড়িভাড়া, সংসার খরচ, বাচ্চার খরচ চালিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। নতুন বছরে বাড়িভাড়া আরো এক হাজার টাকা বাড়ানো হবে বলে মালিক জানিয়ে দিয়েছেন। অফিস, সন্তানের স্কুল এদিকে। তাই অন্য কোথাও গিয়ে বাসা নেয়া একটু কঠিন। করোনার সময় পুঁজি ভেঙে খেয়েছি। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বাসাভাড়া বাড়ছেই।
রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাসায় থাকেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথাত বললে তাদের কথায় অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। ঢাকায় বিভিন্ন পেশায় কর্মরত অসহায় ভাড়াটিয়ারা প্রতিনিয়তই বাড়ির মালিকদের কাছে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। ভাড়াটিয়ার পক্ষ নিয়ে কেউ কাজ করছেন না। অথচ সিটি কর্পোরেশনের বাসাভাড়া বেঁধে দেয়া দায়িত্ব। তারা সে দায়িত্ব পালন করছে না। নতুন বছর এলে এভাবেই মালিকরা বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেন। আমরা কোণঠাসা-অসহায় হয়ে পড়ছি। মালিকরা যদি এতটা লোভী না হয়ে, কিছুটা মানবিক হলে ভাড়াটিয়ারা কোনোভাবে টিকে থাকতে পারতেন। ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়িভাড়া পরিশোধে। ভুক্তোভোগী ভাড়াটিয়ারা বলছেন, বলতে গেলে বেতনের সিংহভাগই বাড়িভাড়া পরিশোধে ব্যয় করতে হয়। এরপরও প্রতি বছরই বাড়ির মালিকরা নিয়মিত ভাড়া বাড়িয়ে দেন। নতুন বছর এলেই আমাদের মতো ভাড়াটিয়ারা আতঙ্কে থাকেন, এই বুঝি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ এলো।
এদিকে কয়েকজন বাড়ির মালিকের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একাধিক ব্যাক্তি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন; যারা চাকরি করে তাদের কি প্রতিবছর বেতন বাড়ে না? আমাদের তো আয়ের উৎস বাড়িভাড়াই। ভাড়াটিয়াদের তো বেতন বাড়ে। আমরা প্রতি বছর ভাড়া বাড়ালে সমস্যা কী? করোনাকালে রাজধানীর বেশিরভাগ বাড়ির মালিকরা ভাড়া বাড়াননি। প্রায় দুই বছর ধরে অনেক বাড়িতে অনেক ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল। আমাদেরও তো কষ্ট হয়েছে তখন। কষ্ট করে আমরাও চলেছি। তাছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যসহ প্রতিটি জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের আয়ের উৎস যেহেতু বাড়িভাড়া, সেহেতু প্রতি বছর না বাড়ালে চলব কীভাবে? অনেক মালিকই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সারা জীবনের আয় দিয়ে বাড়ি তৈরি করে। তাদের টিকে থাকতে হলে নতুন বছরে তো বাড়িভাড়া বাড়াতেই হবে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)৫৯০ বার পড়া হয়েছে




