কোথাও বেড়াতে যাওয়াই হোক কিংবা বাড়ি বদল করে নতুন বাড়িতে ওঠা – নানান কারণেই আমাদের প্রয়োজন পড়ে পোশাক-আশাক, বাক্স-পেটরা আর আসবাবপত্র গোছগাছের। তবে গোছগাছের এই কাজটি যদি ঠিকঠাক মতো করা না যায়, তাহলে উপকারের চেয়ে বরং অপকারই হয় বেশি। আর তাই কড়চা’র এবারের ফিচারে রইলো ঠিকঠাক গোছগাছের জন্য কিছু পরামর্শ। লিখেছেন হাসান মাহমুদ

বাড়ির কর্তা অফিসের কাজে যাবেন বাড়ির বাইরে। তাই তার সবকিছু সময় মতো গুছিয়ে দেয়ার ভার পড়লো গিন্নি’র উপর। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর পর কর্তা আবিষ্কার করলেন সবকিছু ঠিকঠাক মতো থাকলেও ভুল করে মোবাইল ফোনের চার্জারটা ব্যাগে ঢোকাতে ভুলে গেছেন গিন্নি। তাই ফোন করে গিন্নির সাথে বেশ একচোট কথা কাটাকাটি করলেন কর্তা। অথচ মামুলি এই গোছগাছের কাজটা নিজে করতে পারলে হয়তো অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিজের দায় এড়াতে হতো না। তাছাড়া নিজের জিনিস নিজে গোছাতে না জানলে এ রকম সমস্যা হওয়াটাও কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়।

কাথায় যাচ্ছেন, কতদিনের জন্য যাচ্ছেন বা কোন সময়, কেন যাচ্ছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো। উদাহরণস্বরূপ যারা কয়েক মাসের জন্য হলের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ছেন তাদের জামা-কাপড় কিংবা বই পত্রের গোছগাছের সময় পুরো সময়ের চাহিদার কথাই মাথায় রাখতে হবে। তা না হলে কয়েক মাস পরে যখন গরম পড়বে তখন সেই গ্রীষ্মের গরমে পরার মতো প্রয়োজনীয় আরামদায়ক কাপড় হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার হতে পারে শীত আসতে কয়েক মাস বাকি ভেবে আপনি যখন শীতের কাপড় বাসায় রেখেই রওনা হলেন তখন হয়তো পুরো শীতই আপনাকে পার করতে হলো বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেয়া গরম জামায়। ঠিক একই ভাবে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যারা বাড়ি ছাড়ছেন তাদেরকে খেয়াল রাখতে হয় যেখানে ভ্রমণে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়ার কথা। বাংলাদেশের শীত আপনাকে ছুঁতে পারছে না এই ভাবনায় যদি কেউ নেপাল-দার্জিলিং এর পথে বছরের এ সময়ে পা বাড়ান তবে কিন্তু তাকে শীতের জন্য ভ্রমণের মাঝপথেই বাড়ি ফিরতে হতে পারে।

মূলত আপনি কেমন গোছগাছ করতে পারেন তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলা যায় বাড়ি বদলকে। এ সময় ঠান্ডা মাথায় সবকিছু করতে না পারলে আপনার প্রিয় জিনিসের ভীষণ রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে মনের অজান্তে হারিয়েও যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজপত্র। বাড়ি বদলের জন্য সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি হলো বাড়ির সবকিছুকে এক করে না দেখে কয়েকটি ভাগে সেগুলোকে বিন্যস্ত করে পরিবহনের ব্যবস্থা করা। এজন্য সম্ভব হলে বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে দু’তিন দিন সময় নিয়ে সবকিছু পরিবহনের ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে প্রথমেই নানা ধরনের ফার্নিচার যেগুলো বড় হলেও ঠিক সহজে ভঙ্গুর নয় সেগুলো পাঠিয়ে দিতে হবে। তবে সবকিছু পাঠিয়ে রাতের বেলা যেন মাটিতে থাকতে না হয় সে দিকটাতেও খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে এক দলকে পুরোনো বাসা থেকে মালামাল প্যাক করা এবং অন্যদলকে নতুন বাসায় মালামাল গোছানোর দায়িত্ব দিতে হবে। তবে যেন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ওলটপালট না হয়ে যায় সেজন্য একজনকে অবশ্যই এ দু’দলের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এজন্য একটি তালিকা ধরে মালামাল প্যাক করা যেতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে খুব সাবধানতার সাথে ঘরের ইলেকট্রিক সামগ্রী যেমন- টিভি, ফ্রিজ, ওভেন ইত্যাদি ভাল করে প্যাকিং করে পরিবহন করতে হবে। এরপর কাচের তৈরি সামগ্রী এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্রও পরিবহন করতে হবে সমান সতর্কতার সাথে। আর সবশেষের ধাপে নিতে হবে পরিধেয় সামগ্রী সহ ছোটখাটো অন্যান্য সামগ্রী। তবে বাড়ির সদস্যদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- চেক বই, মার্কশীট, ইন্স্যুরেন্স বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফাইল এগুলো একসাথে করে নিজে হাতে করে নিয়ে যেতে হবে। বাড়ির সবকিছু ভালভাবে প্যাকিং করার জন্য প্যাকিং শুরুর আগেই খবরের কাগজ, বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাঁচি, ব্ল্যাকটেপ ইত্যাদি সাথে রাখুন। যারা ক’দিন পর পর বাড়ি পাল্টাতে বাধ্য হন কিংবা যাদের নিকট ভবিষ্যতে বাড়ি পাল্টানোর ইচ্ছে রয়েছে তারা আগে থেকেই নানা ধরনের কার্টন সংগ্রহে রাখুন। বিশেষ করে টিভি, ফ্রিজের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রী যদি এগুলোর অরিজিনাল বাক্সে করে পরিবহন করা যায় তাহলে খুবই ভাল হয়। এছাড়া কার্টনে কোনো ভঙ্গুর জিনিস পরিবহন করতে হলে বাক্সের চারদিকে অবশ্যই খবরের কাগজ বা কাপড় দিয়ে প্যাকিং করুন। এতে অনাকাঙিক্ষত ঝাঁকিতেও কোনো কিছু ভাঙবার ঝুঁকি থাকবে না। আর রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ প্যাক করার অন্তত ২৪ ঘন্টা আগে কানেকশন অফ করে পুরোপুরি ডিফ্রস্ট করে নিন।

গোছগাছের প্রসঙ্গ এলে বাড়ি বদলের পরই আসতে পারে কোথাও বেড়াতে যাবার সময়কার গোছগাছের কথা। এই বেড়ানো হতে পারে আত্মার কোনো আত্মীয়ের বাসায় অথবা দূরের কোনো মনোরম স্থানে স্রেফ ভ্রমণের কথা মাথায় রেখে। প্রায়শই দেখা যায় যে, বাড়ির কর্তা-গিন্নী কিংবা বন্ধুরা মিলে সব কিছু কোনোমতে গুছিয়ে নিলেও শেষ সময়ে এসে খুঁজে পাওয়া যায় না টিকেট বা পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তবে দেশে কিংবা দেশের বাইরে ভ্রমণের জন্য এ জিনিসগুলো যেহেতু সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় তাই গোছগাছের শুরুতেই এগুলো যত্নের সাথে এক জায়গায় নিতে হবে। অন্য সবকিছুর সাথে মিলিয়ে না রেখে এগুলো রাখতে হবে সযতনে, আলাদা স্থানে। সেই সাথে বিপদের কথা মাথায় রেখে যারা দেশের বাইরে বেড়াতে যাবেন তারা আগে থেকেই পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রের একটি ফটোকপি আলাদা স্থানে রাখুন। প্রয়োজনীয় কাগজের পর ভাবতে হবে বেড়ানোর সময় আপনার প্রয়োজনীয় পোশাক এবং অনুষঙ্গের কথা। যে স্থানে বেড়াতে যাচ্ছেন সেই স্থানের চরিত্র এবং আবহাওয়া সম্পর্কে আগে থেকেই একটি ধারণা রাখুন। উদাহরণস্বরূপ যারা কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাচ্ছেন তাদেরকে অবশ্যই সমুদ্রের পানিতে নামার মতো পোশাক আগে থেকে নিয়ে যেতে হবে। একই ভাবে যারা দেশের বাইরে শীতপ্রধান কোনো স্থান যেমন- নেপাল, সিকিম প্রভৃতি স্থানে যাচ্ছেন তাদের সাথে নিতে হবে সম্ভব সব রকমের শীতের পোশাক। যেহেতু বেড়ানোর সাথে ছবি তোলার বিষয়টির সম্পৃক্ত তাই চেষ্টা করুন যাতে কম পোশাকের মধ্যেও কিছুটা বৈচিত্র্য নিয়ে আসা যায়। এজন্য হোটেল রুমে পড়ার জন্য খুব বেশি কাপড় না নিয়ে বাইরের পোশাকগুলোকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। এছাড়া মোবাইলের চার্জার, প্রয়োজনীয় ঔষধ, সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, বডি স্প্রে, পারফিউম, মোজা, অন্তর্বাস ইত্যাদি নিতে হবে বুঝে শুনে। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় যদি বন্ধু কিংবা বাড়ির লোকেরা বসে প্রথমেই সম্ভাব্য জিনিসের একটি সাধারণ তালিকা করে নিয়ে সেই তালিকা অনুযায়ী গোছগাছ করেন। এতে প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সহজে বাদ পড়ে না, তেমনি বেড়ানো থেকে ফেরার সময় এই লিস্ট মিলিয়ে ফের গোছগাছ করলে কোনো কিছু মনের ভুলে হোটেলে ফেলে রেখে আসার সম্ভাবনাও অনেক কমে। আবার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াটা যদি বিয়ে বা এ জাতীয় কোনো নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য হয় তাহলে বিয়েতে পরার মতো কমপক্ষে দু’তিনটি পোশাক এবং সেই সাথে ম্যাচ করে পরার মতো আনুষঙ্গিক আগে থেকেই ব্যাগে নিতে হবে। আর হ্যাঁ, যে ব্যাগ বা লাগেজে করে আপনার সমস্ত মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন সেটার শক্তি বা স্থায়িত্ব সম্পর্কেও কিন্তু যথার্থ ধারণা রাখতে হবে। এর পাশাপাশি যারা বেড়াতে গিয়ে শপিংও সারতে চান তাদেরকে আগে থেকেই অতিরিক্ত জিনিস বহনের প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।

ফিচার বিজ্ঞাপন

সিঙ্গাপুর ভিসা (চাকুরীজীবী)

মূল্য: ১০,০০০ টাকা

Manila & Angeles City 5D/4N

মূল্য: 55,900 Taka

Maldives (Hulhumale & Fun Island) 3D/2N

মূল্য: ২৮,৯০০ টাকা

বেড়াতে যাওয়ার পাশাপাশি ছাত্র কিংবা ছাত্রীদের প্রায় সময়ই বাড়ি থেকে হল আর হল থেকে বাড়ি ফেরার প্রয়োজনে বাক্স-পেটরা গোছগাছ করতে হয়। আর এসব ক্ষেত্রে পরিবারের কারো সাহায্যের চেয়ে যে হলে থাকবে সে-ই যদি সবকিছু বিবেচনা করে গোছগাছ করে, তাহলে সেটাই অনেক বেশি কার্যকর হয়। যারা প্রথমবারের মতো বাড়ি ছেড়ে হলে যাচ্ছে তাদেরকে আগে থেকেই হলের পরিবেশ সম্পর্কে একটি ধারণা রাখতে হবে। কেননা সবক্ষেত্রে প্রয়োজন না পড়লেও মাঝে মাঝে তোষক-বালিশ থেকে শুরু করে এমনকি ভাত খাবার প্লেটটা পর্যন্ত বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া বাড়ি ছেড়ে হলের পথে পা বাড়ানোর সময় আগামী কয়েক মাসের প্রয়োজন মাফিক পোশাক, প্রয়োজনীয় বই-খাতা, অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যেমন সাবান, পেস্ট, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে ইত্যাদি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে হল ছেড়ে ছুটিতে বাড়ি ফেরার সময় যে সব পোশাক এখন আর প্রয়োজন নেই বা যেসব পোশাক বাড়িতে নিয়ে ভাল করে ধোয়া প্রয়োজন সেগুলো অবশ্যই আগে থেকে ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। এছাড়া খুব প্রয়োজন না হলে ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ‘ডকুমেন্টস’-এর একটি করে ফটোকপি রেখে মূল কপি বাড়িতে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

মডেল শম্পা
ছবি আশীষ সেনগুপ্ত
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১,০৩৬ বার পড়া হয়েছে