অনেকদিন ধরে যাব যাব করে শেষমেষ গত ২৩ মার্চ’১৮ তে রওনা হয়ে গেলাম ব্রিটিশদের কালাপানি খ্যাত, টুরিস্টদের নীলপানির দ্বীপ এবং ভারতের কেন্দ্রশাসিত সাতটি ইউনিয়ন টেরিটরিস এর প্রথম টেরিটরি… আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ! 

ছোটবেলায় ভূগোল ম্যাডামের লেকচারের শুধু আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ শব্দটাই মনে ছিল আর তেমন কিছুই মনে ছিল না। কিন্তু ঘুরতে যাব চিন্তা করার পর থেকে হালকা হালকা স্টাডি করার কারণে এখন অনেক কিছুই মনে পরে গেল। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই এই দ্বীপপুঞ্জ আদিবাসীদের আবাসস্থল। পরে ব্রিটিশ তা দখল করে, শাসন করে, পরে ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপান দখল করে, শোষণ করে, এরপর ভারতের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা উত্তর ভারত সরকার এখন পর্যন্ত তা শাসন করে চলেছে। 

আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ বঙ্গোপসাগর এ অবস্থিত হলেও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে অনেকটা থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ ও বিচ গুলোর মতোই । তা হবার কারণ হচ্ছে এই দ্বীপপুঞ্জ যতটা না ভারত ভূখন্ডের কাছে তার চেয়ে অনেক বেশী থাই-মালে-ইন্দোনেশিয়ার কাছে। এবং এখান থেকেই আন্দামান সাগর শুরু হয়েছে। আরব বনিকরা আন্দামান দিয়েই ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় প্রবেশ করেছিল।

আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডস দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু উত্তর দিকের দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান (রাজধানী Port Blair), আরকিছু দক্ষিণের দ্বীপ নিয়ে গঠিত নিকোবর (রাজধানী Car Nicobar)। এবং এই দুইটি গ্রুপ নিয়ে “আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডস” ইউনিয়ন টেরিটরিস গঠিত, যার রাজধানী পোর্ট ব্লিয়ার। যাই হোক এইহলো আজকের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এর সংক্ষিপ্ত কিছু ইতিহাস।

★★★ভিসা:- 
যেহেতু এটি ভারতের টেরিটরিস, তাই এখানে যেতে ভারতের টুরিস্ট ভিসা নিতে হবে। তবে একটি স্পেশাল পারমিশন নিতে হবে অনস্পট, তা খুবই সহজ।

★★★আন্দামান পারমিশন :- 
আন্দামান ও নিকোবর আইল্যান্ডস ভারতের রেস্ট্রিকশন এরিয়াগুলোর একটি। তাই এখানে এন্ট্রি করতে আপনাকে একটি পারমিশন ও স্পেশাল ইমিগ্রেশন করতে হবে। সেটি আপনি আন্দামান এয়ারপোর্ট বা সী-পোর্ট এ পাবেন। আপনি এয়ার বা নৌ যেরূট দিয়েই আসেন না কেন আপনি ঔ পোর্টে এই পারমিশন নিতে পারবেন। 

আমি কলকাতা থেকে ফ্লাইটে এসেছিলাম। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এর একমাত্র এয়ার পোর্ট Port Blair এ যথা সময়ে ল্যান্ড করলাম। ফ্লাইট থেকে নেমে আমরা সবাই টার্মিনাল বিল্ডিং এ ঢুকলাম, ঢুকতেই একটি ডেক্স আছে ফরেনারদের পারমিশন ও ইমিগ্রেশন এর জন্য। আমি ওখানে গেলাম, তারা আমাকে একটি ফরম দিল, সাথে কলমও দিল। ফরম টি একটু বড়, সময় লাগে ফিলাপ করতে, তবে কমপ্লিকেটেড কোনকিছু নেই। ফরম টি ফিলাপ করে অফিসারকে দিলে তিনি একটি প্রিন্টেড পারমিট লেটার দিবে, সাথে পাসপোর্ট এ একটি এন্ট্রি সীল দিবে, পাসপোর্ট এ সীল দেয়ায় মনে হলো আমি কোন আরেকটি দেশে গেলাম। এরপর আমি বেল্ট থেকে আমার লাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।

 সতর্কতা – পারমিট লেটারটি মোবাইলে ছবি তুলে রাখবেন সাথে সাথে। এটিই আপনার মেইন ডকুমেন্ট যতক্ষন আন্দামান আছেন। সব জায়গায় সর্বক্ষেত্রে এটি আপনাকে শো করতে হবে।

★★★কিভাবে যাবেন:-
একটি নৌ-পথে জাহাজ দিয়ে, আরেকটি আকাশ পথে ফ্লাইটে। 
জাহাজে শুনলাম কলকাতা, বিশাখাপত্তন ও চেন্নাই থেকে যাওয়া যায়। সময় লাগে তিনদিন এর মতো। 
আমি গিয়েছিলাম ফ্লাইটে কলকাতা থেকে। জার্নি টাইম ২ ঘন্টা। যাওয়ার সময় Jet airways এ গিয়েছি ভোরে, আসার সময় SpiceJet এ করে এসেছি বিকালে। একমাস আগে টিকেট করেছিলাম, ভাড়া পরেছিল ১২০০০ টাকা। ভাড়া অনেকটা এরকমই, ১-২ হাজার টাকা কমাতে পারতাম যদি ২-৩ ঘন্টার আগের ফ্লাইট নিতাম। কিন্তু ফেরী পৌছানোর সময়ের সাথে মিলাতে এই রেটে করতে হয়েছে। টিকেটের দাম ডে বাই ডে ভয়ংকর আকারে বাড়তে থাকে যত দিন ঘনিয়ে আসে, এমন কি ৩০-৪০ হাজার টাকাও রিটার্ন টিকেট শো করে। তাই যদি ফ্লাইটে যাওয়ার নিয়ত করে রাখেন তাহলে মিনিমাম মাস খানেক আগে টিকেট করে ফেলুন।

★★★আন্দামান এয়ারপোর্ট :-
Veer Savarkar Int. Airport, Port Blair…. আন্দামান ও নিকোবর এর একমাত্র ছোট খাটো বিমানবন্দর।
এয়ারপোর্ট পারমিশন ফরমালিটি শেষ করার পর লাগেজ নিয়ে মেইন টার্মিনাল বিল্ডিং ক্রস করে বের হলেই ট্যাক্সি, ক্যাব, মাইক্রো এর ড্রাইভারের ডাকাডাকি। সৌখিন ও আরামপ্রিয় দের কোনই সমস্যা নেই, নিজের পছন্দ মতো একটি বাহন নিয়ে চলে যান গন্তব্যে। আর যারা আমার মতো বাজেট ট্রাভেলার আছেন তারা হেঁটে ২মিনিট পার্কিং ক্রস করে মেইন রোডে চলে আসুন। সেখানে আপনি অটো পাবেন। উঠানামা ২০-২৫ রুপি কাছে হলে। দূরত্ব ও স্পট হিসেবে ভাড়া বেশী মনে হয়নি। আমি জেটিতে গিয়েছিলাম ফেরীর টিকেট করতে, ভাড়া নিয়েছিল ৭০ রুপী।

★★★কোথায় কোথায় ঘুরবেন:- 
নিকেবর আইল্যান্ডে তেমন কাউকে যেতে শুনিনি, কেন যায় না টুরিস্টরা তা জানি না বা জানার চেস্টাও করিনি। 
আমি শুধুমাত্র আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এর পোর্ট ব্লেয়ার, হ্যাভলক আইল্যান্ড ও নীলস আইল্যান্ড গুলো সফর করেছি। নিচে একটি একটি করে আমার সফর বিবরণ শেয়ার করছি।

পোর্ট ব্লেয়ার:- 
হোটেল -: আন্দামানে হোটেল একটি বিরাট সমস্যা মনে হলো বাজেট ধারীদের জন্য। ৫০০-৬০০ রুপীর প্রচুর হোটেল/গেস্ট হাউজ। কিন্তু একটিতেও ফরেনার থাকার পারমিশন নাই। যেসব হোটেল গুলো ফরেনার পারমিশন আছে ওগুলো ২০০০ রুপী থেকে শুরু। আগেই বলেছি আমি প্রথমে  জেটিতে গিয়েছিলাম। সেখানে লাইনে দাঁড়ায় থাকার সময় কিছু স্থানীয়দের থেকে জেনে নিয়েছি কোথায় সস্তায় হোটেল আছে। তারা বাস স্টেশনের কাছে যেতে বলেছিল। তাই ওখানে গিয়ে খুঁজলাম অনেক সস্তা হোটেল কিন্তু আমাকে দিল না ফরেনার বলে। সে সব হোটেলের ম্যানেজার কর্তৃক হেল্প নিয়ে জানতে পারলাম ১০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে একটি হোটেল আছে যা কিছুটা সস্তা এবং ফরেন পারমিশন আছে। হেঁটেই গেলাম দেখি একটি সুন্দর সাদা “জামে মসজিদ” যেটি আমার লিস্টে ছিল দেখার, তার ঠিক অপজিটে এই হোটেল। নাম Raja Monsoon Hotel. পেলাম হোটেল রুম, ভাড়া ১০০০ রুপি। চারতলার উপর রুম, পাহাড় কেটে বানানো হোটেল বিল্ডিং। হোটেলের মালকিন ভাল, কলকাতা অধিবাসী। চার তলার খাড়া সিড়ি বেয়ে উঠতে কস্ট লাগলেও উঠার পর সৌন্দর্য্য দেখে মনটা ভরে গেল। চারতলায় ৫-৬ টা রুম, সামনে একটি ওপেন বিশাল ছাদ, অনেকটা কমন বারান্দা। রেলিং আছে, চেয়ার আছে। বসে বসে পুরাটা জামে মসজিদ ও পোর্ট ব্লিয়ারের অনেকটা শহর দেখা যায়, এবং বাতাস তো আছে প্রচুর।
হোটেল মালিককে রুম নেয়ার আগে পাসপোর্ট ও পারমিট কপি দিতে হবে। এছাড়া হোটেলে এন্ট্রি হবে না।

সেলুলার জেইল

ঘুরার স্পট-: অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলাম আন্দামান যাব আর মোটরবাইক ভাড়া নিয়ে পুরা শহর ঘুরে দেখব সচরাচর আমি প্রতিটি দেশে যা করে থাকি। কিন্তু এখানে তা পেলাম না ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার কারণে। আফসোস নিয়ে কাছের স্পট গুলো হেঁটে হেঁটে আর দূরের গুলো অটোতে করে ঘুরে নিলাম। কিছু বেদরকারি স্পট বাদ দিলাম সময়ের অভাবে।

*সেলুলার জেল-: আন্দামানের ঐতিহাসিক কোন নিদর্শন এর নাম আসলে সবার আগে এটি আসে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় ব্রিটিশরা এটি তৈরী করেছিল। এখানে আন্দোলনকারীদের আজীবন বন্দী করে রাখা হতো। এটার ইতিহাস অনেক প্রসিদ্ধ। গুগল করে পড়ে নিবেন। ফটোগ্রাফীর জন্য সুন্দর জায়গা।
এটির এন্ট্রি ফি- লোকাল ৩০ রুপি, বিদেশী ১০০ রুপি।

*Rajiv Gandhi statue: সেলুলার জেলের পাশেই হেঁটেই যাওয়া যায়, খুবই সুন্দর পরিবেশে এটি বানিয়েছে।

*Corbyn’s cova beach: মোটামুটি সুন্দর ও নিরিবিলি বিচ। শহর থেকে একটু দূরে। অটোতে গেলে ২০০ রুপি রিটার্ন।

এছাড়া আপনারা ঘুরতে পারেন কিছু মিউজিয়াম… Naval marine museum, Forest museum, Anthropological museum, Kalapani museum. 
আরো আছে… Gandhi park, Marina park, Mini zoo, Gandhi state circle, Clock tower, Science centre etc. 
Port Blair থেকে আশেপাশের কিছু আইল্যান্ড ও বিচ আছে যেখানে ডে ট্রিপ করা যায়। যেমন… Smith & Ross island, wandoor beach.

ফেরী করে অন্য দ্বীপে যাওয়ার সময়

★★★Ferry Ticket & jetty ghat :-
Port Blair এ কয়েকটি জেটি বা ফেরী ঘাট আছে, আমি প্রথম দিন এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই তারপর দিনের Havelock এর টিকেট করেছিলাম। যে জেটি থেকে টিকেট করতে হবে তা হলো Phoenix Bay ferry ghat. রাস্তা থেকে ঘাটের টিকেট কাউন্টারে যেতে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটতে হয়। 
আমি PB থেকে HL এর ভাগ্যক্রমে সরকারি ফেরীতে ৪৫০/৬৫০ রুপীর নরমাল সীটের টিকেট পাইনি। বলল শেষ হয়ে গিয়েছে। তখন ১১০০ রুপির ডিলাক্স এসি কেবিন খালি ছিল, তাই নিলাম। চিন্তা করলাম প্রাইভেট ফেরীর টিকেট ফেয়ার মিনিমাম ১১০০ রুপি থেকে শুরু, তাও সীট। এখানে সেইম খরচে ডিলাক্স কেবিন, ছাড়বেও ভোর ৬.২০ টায়, খারাপ কি! 
পরদিন ভোরে হোটেল থেকে বের হয়ে অটো নিয়ে চলে গেলাম ঔ জেটিতে কিন্তু আমার টিকেটের জেটি নম্বর আরেকটি ছিল, ভুল আমারই, আমি টিকেট পড়ে দেখিনি কত নম্বর জেটি। আবার অটোতে করে ঔ জেটিতে চলে গেলাম। টোটাল ভাড়া ৮০ রুপি গেল। 
জেটিতে গিয়ে দেখি বিশাল কাজকারবার, রাস্তাতেই বিশাল লাইন। মেইন গেইটে চেক ও স্ক্যান করে ঢুকাচ্ছে। সাথে পাসপোর্ট ও পারমিট লেটার চেক করছে। আবার কিছুদূর হেঁটে গেলেই আবার ডকুমেন্ট চেক। এভাবে কমপক্ষে শীপে উঠার আগ পর্যন্ত ৫-৬ বার চেক করল আইডি ডকুমেন্ট। তারপর যা হলো তা আমার জন্য বিরাট ইতিহাস!

সকাল থেকে মন খারাপ ছিল ফেরী টিকেটে বাজেট ফেইল করার জন্য, কিন্তু এসে দেখি বিশাল একটা জাহাজে আমাদের সবাইকে তুলছে, নাম Coral Queen. ইউটিউবে দেখেছি সরকারী ফেরী গুলো ছোট এবং দেখতে একদমই সুন্দর না। কিন্তু এটাতো দেখছি বিশাল সুন্দর একটি শীপ। এটাতে চড়তে না পারলে আফসোসই করতাম। আলাপের মাধ্যমে জানতে পারলাম এটি এই রূটের জাহাজ নয়, এটি অন্য একটি স্টেট এর জাহাজ, কেউ বলল ইন্টারন্যাশনালিও চলে, তবে যাই হোক ভিতরের ডেকোরেশন চমৎকার।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Dubai (City tour- Abu Dhabi tour) 4D/3N

মূল্য: 16,900 Taka

Canada Visa for Businessman

মূল্য: 10,000 Taka

আমি কেবিনে ঢুকে সারপ্রাইজড হলাম। পুরাটাই সাদা, চারজনের জন্য চারটা বেড, বাথরুম খুবই পরিস্কার। খিদা লাগল, আমাদের কেবিনের পাশেই প্রাইভেট ডাইনিং ও ড্রইং বিশাল রুম। তারপর ওটা ক্রস করে বাহিরে গেলাম ডেকে। দেখি ওখানে ডেকের একপাশে কেন্টিন, ডিজে পার্টি সিস্টেমে গান হচ্ছে, খোলা জায়গায় সবায় বসে খাচ্ছে, গল্প করছে, ছবি তুলছে, আর কেউ গানের সাথে সাথে নাচতেছে। খাবার পুরাই সস্তা, ২০ রুপি প্লেট নুডুস খেয়েই পেট ভরে গেছে। অনেক ধরনের আইটেম ছিল।

রাধানগর বীচ

পোর্ট ব্লিয়ার ফিরে আসার সময় সরকারী ফেরী তে এসেছিলাম, পুরাই হতাশ, ছাড়পোকার যন্ত্রনায় সীটে বসা যায় না। খাওয়ার কোন কেন্টিন নাই। এক সাদা চামড়ার মহিলা ফরেনার ছিল পাশের সীটে, তিনি কিছুক্ষন পরপর পায়ের সেন্ডাল হাতে নিয়ে পোকা মারছিল তার বসার সীটে। ৫-৬ বার পোকা মারার পর উঠে কোথায় চলে গেছে আর আসেনি।

আমি টোটাল তিনটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছি যেখান থেকে আপনি এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে ফেরী পারাপার করতে পারেন।
১) সরকারী ফেরী
২) Green Ocean (private)
৩) Makruzz (private)

private ফেরী গুলোর টিকেট আপনি আগেই অনলাইনে করতে পারবেন। দাম খুবই বেশী, সর্বোনিম্ম টিকেট ১১০০ রুপি। আর সরকারী ফেরীর টিকেট সরাসরি কাউন্টার থেকে কাটতে হয়। সর্বনিম্ন টিকেট ৪৫০ রুপি। কিন্তু আন্দামান বাসীর জন্য মাত্র ৫০ রুপি। আগে আন্দামানবাসীদের টিকেট দিবে তারপর অন্যরা। আন্দামানবাসীর আলাদা আইডি কার্ড আছে। এজন্যই কাউন্টারে টিকেট থাকলেও নাই বলে। আমি আসার সময় এক দালার ধরে সরকারী টিকেট বের করেছি ২৫০ রুপি বেশী দিতে হয়েছিল।

Havelock ও Neil islands এর জেটি ছোট খাটো, জেটির পাশেই সব সরকারী প্রাইভেট টিকেট কাউন্টার।

Neil Island:
বেশী সময় দেইনি এইখানে, ছোট একটি দ্বীপ, অনেকটা প্রাইভেট এর মতো। ইউটিউবের মাধ্যমে একটি হোটেলের খোজ পেয়েছিলাম, এক ইংলিশ দম্পতি ভিডিও করেছিল, তারা Kalapani Resort এ ছিল। ওখানে গেলাম, জেটি থেকে একটু দূরে, অটো ১০০ রুপি নিল। কর্টেজ মালিক বাংগালি, ভাড়া ৬০০ রুপি নিল। 
ঘুরবেন:- 
Laxmanpur beach, Natural bridge, Bharatpur beach.
অটো নিয়ে ঘুরতে হবে, চাইলে সাইকেল বা বাইক ভাড়া নিয়েও ঘুরতে পারবেন।

Havelock Island : 
এটি আন্দামানের সান্তোসা(সিংগাপুর)। সবকিছুর দাম একটু অতিরিক্তই বেশী বেশী। এখানেও সেইম সমস্যায় পরেছি হোটেল নিয়ে। ৩০০০ রুপির নিচে কোন হোটেলই পাচ্ছিলাম না। জেটির পাশেই প্রচুর গেস্ট হাউজ মিডিয়াম দামে নতুন করেছে, কিন্তু তাতে ফরেনার পারমিশন নাই। তখনই এক বাংলাদেশী প্রেমি হোটেল ম্যানেজার একজন দালালের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, সেই দালালও বাংলাদেশী বংশদ্ধুত। সে আমাকে তার বাইকে করে এক কিমি দূরে একটি নতুন তৈরী আরেক বাংলাদেশী বংশদ্ধুত এর হোটেলে নিয়ে গেল। দাম নিল ১২০০ রুপি। ঘরোয়া পরিবেশ, আগে বলে রাখলে খাবারও রান্না করে দেয়। 
ঘুরবেন :- 
Radhanagar beach, Elephant beach, Kalapathar beach, Govind nagar beach, Vijay nagar beach.

হেবলকে বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য আশির্বাদ হচ্ছে এখানে সরকারী সিটি বাস আছে। মোট দুইটি রোড। একটি কমন রোড জেটি থেকে শুরু হয়, তা ৩ মাইল যাওয়ার পর দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি রাধানগর বীচের দিকে, আরেকটি কালাপাথর বীচের দিকে। জেটি থেকে সকাল থেকে ২-৩ ঘন্টা পরপর দুইটি বাস ছাড়ে দুই রূটে যায়।

Elephant beach:- রাধানগর বাসটিতে করে এলিফেন্ট বিচে যাওয়া যায় ২০ মিনিট লাগে, বাস ভাড়া ১১ রুপি। বাস থেকে নেমে ১.৮ কিমি ট্র্যাকিং করতে হয় ফরেস্টের ভিতর দিয়ে তারপর সেই কাংখিত এলিফ্যান্ট বিচ। এখানে ওয়াটার স্পোর্ট করে বেশীর ভাগ টুরিস্ট। আমি ৭০০ রুপিতে স্নোকেলিং করেছি। যারা ট্র্যাকিং করতে পারবেন না তারা জেটি থেকে সকালে স্প্রিটবোট ছাড়ে সেটিতে করে আসতে পারেন সরাসরি। ভাড়া আসা যাওয়া ৯৫০ রুপি। দুপুর ১.৩০ টার পর আর কেউ এলিফেন্ট বিচে এন্ট্রি করতে পারবে না, যেহেতু এটি ফরেস্ট বিচ তাই নিরাপদ নয়। যারা যাবেন তারা সকালেই চলে যাবেন।

*Radhanagar beach:- গুগল করে এবং পরে স্থানীয়দের মারফত জানতে পারলাম এটি এশিয়ার ১ম সুন্দরতম বীচ এবং ওয়াল্ডের ৭ম সুন্দরতম বীচ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। মাত্র ১২ রুপি বাস ভাড়া দিয়ে আপনি জেটি থেকে এই বিচে আসতে পারবেন। আসলেই বিচটি সুন্দর এবং অনেক বড়।

*Kalapathar beach:- ছোট বিচ কিন্তু দেখতে অনেক কিউট। জেটি থেকে কালাপাথর গামী বাসে করে আসতে হয় ৩০-৪০ মিনিট লাগে। ভাড়া ১২ রুপি। 
এই কালাপাথর গামী বাসে করে বিজয়নগর বিচ ও গবিন্দনগর বিচ এ যাওয়া যায়, আহামরি কেন বিচ নয় শুনে আর যাওয়া হয়নি। 
সব সময় বাস থেকে নেমে পরবর্তী বাস কয়টায় ছাড়বে তা জেনে নিবেন। না হয় বাস মিস করলে কার বা টেক্সিতে যেতে হবে অনেক বেশী ভাড়া দিয়ে। মিনিমাম ৩০০-৪০০ রুপি তো হবেই।

খাওয়া দাওয়া:- 
এটাতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কারণ আমি ভারতে স্ট্রীট ফুড বেশী পছন্দ করি। 
পোর্ট ব্লিয়ার এ দুপুরে ভুল করে একটি রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে পরছিলাম গরম ও ক্ষুধার যন্ত্রণায়। ২৫০ রুপি মাছ ডাল ভুনা ভাত সবজি খেলাম। রাতে হাঁটতে বের হয়েছিলাম ঘুরে দেখতে, সেখানে বাস টার্মিনাল এর পাশে ১০০ রুপির ডিম থালি খেলাম।

নীলে ১৫০ রুপির বিরিয়ানি খেলাম, সমুচা, পাকোড়া খেলাম।

হেবলকে মাছ থালি খেলাম ১৩০ রুপিতে, আরেকবার ১৩০ রুপির ডিম থালি, বিচে ঝালমুড়ি ৫০ রুপি, সমুচা ২টা ৩০ রুপি, সেন্ডুইস খেলাম ৭০ রুপি, লেমন জুস ৩০ রুপি, পানি এক লিটার ৩০ রুপি করে। 
এই পাঁচদিনে প্রচুর পানি কিনে খেতে হয়েছে।
সবমিলে খুব একটা বেশী খরচ হয়নি খাওয়াতে।

পোর্ট ব্লেয়ার এয়ারপোর্ট টু কলকাতা:- 
এয়ারপোর্টে এসে আগে বোডিংপাস নিতে হবে, তারপর ইমিগ্রেশন ডেক্সে গিয়ে পাসপোর্ট ও পারমিট লেটার দিতে হবে। অফিসার পারমিট লেটার রেখে দিবে আর আপনার পাসপোর্ট এ এক্সিট সীল দিয়ে দিবে। তারপরের কাজকর্ম গুলো অন্য এয়ারপোর্ট এর মতই। 
কলকাতা এয়ারপোর্ট এর পাশেই ৩নং এ জগন্নাথ হোটেলে ছিলাম। ভাড়া ১০০০/- রুপি।

★খরচপাতি::- 
চট্টগ্রাম কলকাতা চট্টগ্রাম(এয়ার)- ১২০০০/- টাকা
কলকাতা আন্দামান কলকাতা(এয়ার)- ১২০০০/- টাকা
হোটেল ভাড়া(৫ রাত)- ৭০০০/- টাকা
ফেরী টিকেট- ৩০০০/- টাকা
ট্রান্সপোর্টেশন- ১০০০/- টাকা
খাওয়া- ৩০০০/- টাকা
::::::::এগুলো সবার কমন খরচপাতি। আমার আরো অন্য খরচ ছিল,তাই আমার কত খরচ হয়েছে তা আর জিঙ্গাসা করবেন না দয়াকরে।

***দেশে বিদেশে আমরা যেখানেই ঘুরতে যাই পরিবেশ যাতে নোংড়া না করি, আবর্জনা যথা স্থানে ফেলি, শব্দ দূষণ যাতে না করি।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত আয়োজন এখানে অপেক্ষা করছে

পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত ...



১,৩৩৫ বার পড়া হয়েছে