পাহাড়ি বনে এখানে সারাক্ষণ তারস্বরে ডেকে চলেছে পাখি—তার কোনো কোনোটার কণ্ঠ চেনা যায়, তবে বেশির ভাগই অচেনা। হঠাৎ কোথাও উঁকি দেয় বরফঢাকা হিমালয়ের কোনো নাম না–জানা চূড়া। মানুষের উপস্থিতি এখানে নীরবতার ধ্যান ভাঙায় না। ঢাকা শহরের অস্থির পরিবেশ, ইঁদুরদৌড়ের নিত্যযাপনে পাহাড়-প্রকৃতি-মানুষ নিয়ে পাহাড়ি শহর পেলিং যেন একখণ্ড মরূদ্যান! এ জন্য এখানে এলে কোনো পরিকল্পনা কাজ করে না। আমারও করেনি। চোখের সামনে হিমালয়ের এমন রূপ রেখে চোখ বন্ধ করা সত্যিই কঠিন।
২.
খুব ছোট্ট একটা শহর পেলিং, সিকিমের পশ্চিমে যার অবস্থান। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব ১৩০-১৩৫ কিলোমিটার। চাইলে দার্জিলিং থেকেও পেলিং যাওয়া যায়। প্রায় ৭ হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে পেলিংয়ের অবস্থান। পেলিংয়ে খুব অল্প মানুষের বসবাস। পথে বা পাহাড়ে হেঁটে বেড়াতে চাইলে নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই তেমন একটা চোখে পড়ে না। পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা ছোট্ট পাহাড়ি শহর পেলিংকে শহর না বলে পিচঢালা পথ, গাড়ি আর নানা রকম আধুনিক সুবিধার হোটেল-মোটেলসংবলিত অপার্থিব সৌন্দর্যের পাহাড়ি গ্রাম বলাই ভালো। মেঘমুক্ত অবস্থায় এ শহর থেকে সব সময় দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ হিমালয়ের নাম না–জানা বিভিন্ন চূড়া। এখান থেকে শুরু হয় বিভিন্ন ট্রেকিং রুট। ট্রেকিং করতে চাইলে গাইড নিয়ে চলে যেতে পারেন মনের মতো কোনো জায়গায়। রোমাঞ্চকর নানা রকমের রাইড শুরু করার অন্যতম জায়গাও এই পেলিং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নির্জনতা ছাড়া কী দেখবেন পেলিংয়ে, সে কথায় আসছি। তার আগে এই অপার্থিব নির্জন জায়গা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি বলে নেই।
রাতে ঘুমানোর আগে পরদিন পেলিংয়ে কী কী করব, তার একটা খসড়া করে রেখেছিলাম। এক বন্ধুর পরামর্শমতো যাব খেচিওপালরি লেক দেখতে। যেখানে হেঁটে বা একটু চেষ্টা করলে শেয়ার গাড়িতে করেও যাওয়া যায়। খুব সকালে উঠে, রুমের চা আর বিস্কুট খেয়ে, পানির বোতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব পথে, লোকেশন জেনে নেব হোটেলের রিসেপশন থেকে, হেঁটে হেঁটে উপভোগ করব নির্জনতার সৌন্দর্য—পরিকল্পনা ছিল এ রকমই। কিন্তু কে জানত, আমার এই বিলাসী রুম, আরামের বিছানা, নরম তুলতুলে লেকের উষ্ণতা, একাকী ব্যালকনির চেয়ার মিটিমিটি হাসছে আমার পরিকল্পনা জেনে? কেই–বা বুঝতে পেরেছিল আমি ঠায় বিছানাতেই শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেব সেই শেষ রাত থেকে সকাল পেরিয়ে মধ্যবেলা পর্যন্ত!
আধো ঘুম ভাঙা অলস চোখ খুলতেই জানালায় চোখ পড়ল প্রথমে। বেশ দূরে, আধো আলো-অন্ধকারে কুয়াশায় জড়ানো পাহাড় সারির ওপরে কিছু একটা চিকচিক করছে। যেটা দেখে চোখ তার অলসতা দূর করে বেশ বড় করে তাকাল। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, ওটা বরফে মোড়ানো হিমালয়ের কোনো এক নাম না–জানা চূড়া। এরপর কি ঘুম আসে? এরপর কি আর অন্য কিছু ভাবা যায়? এরপর বিছানায় হেলান দিয়ে, লেপ আঁকড়ে ধরে শুধু জানালায় চেয়ে থাকা। একটু একটু করে রাত শেষ হয়, একটু একটু করে আলো ফোটে। আর একটু একটু করে বরফে মোড়ানো পাহাড়ের চূড়াগুলো হেসে উঠতে থাকে। ভোরের নরম আলো পড়া এসব বরফ মাখানো চূড়ার দিকে অনন্ত কাল তাকিয়ে থাকা যায়।
হিমালয়ের ভয়ংকর সৌন্দর্য ছাড়া আরও দুটো জিনিস দেখার আছে পেলিংয়ে। একটি স্কাই ওয়াক, অন্যটি প্রবহমান তিস্তা।
৩.
কয়েক শত ফুট ওপরে স্বচ্ছ কাচের রাস্তায় হাঁটার জন্য মনে সাহস থাকা চাই। সে জন্যই বলছি, যাদের উচ্চতাভীতি আছে, তাদের এ শহরে না আসাই ভালো। পাহাড়চূড়ায় বড় বড় স্টিলের পাতের ওপর স্বচ্ছ কাচের তৈরি পথে যখন হাঁটবেন, তখন আপনার রক্তচাপ বেড়ে যাবে, স্নায়ুতে উঠবে রোমাঞ্চের শিহরণ। আর সে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়বে আপনার নিউরনে। আপনি চমকে উঠতে বাধ্য হবেন। পাহাড়-বন-আকাশ ছাড়াও স্কাই ওয়াক এ শহরের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Maldives (Paradise Island-Water Vila & Hulhumale) 4D/3N
Dubai (City tour- Abu Dhabi- Burj Khalifa) 6D/5N
Canada Visa for Businessman
বেশ বড়সড় একটা রঙিন ভবন, আর তার বিশাল গেট পেরিয়ে গেলেই ধাপহীন সিঁড়ি এঁকেবেঁকে উঠে গেছে পাহাড়ের ওপরে বানানো একটা বিস্তৃত ছাদের মতো প্রশস্ত সমতল জায়গায়। এই সমতল জায়গায় নানা রকম মানুষের জটলা। নানা রকম ভঙ্গিতে ছবি তুলছে সবাই, কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গল্প করছে একে অপরের সঙ্গে। আর অনেকের দৃষ্টি পিতলের চাকার মতো একটি স্থাপনায়। সেদিকেই প্রথমে চোখ চলে যাবে। এটা কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নয়, স্বচ্ছ কাচের ওয়াক ওয়েতে যাওয়ার দরজা। ছোট্ট গেট দিয়ে এখানে জুতা খুলে ঢুকতে হয়। সবার মতো আমিও ঢুকে গেলাম। দুই পাশে স্বচ্ছ কাচের কোমরসমান দেয়াল আর পায়ের নিচে ৫ থেকে ৬ ফুট প্রশস্ত কাচের পথ। পাহাড়ের গায়ে স্টিলের কাঠামোর ওপর এই কাচের হাঁটাপথ। নিচে তাকালেই মনের মধ্যে একটা ভয় ভয় রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয় বলে নিচের দিকে না তাকিয়েই এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত হেঁটে গেলাম। একদম পাহাড়ের চূড়ায় আঁকাবাঁকা এই কাচের পথে হেঁটে দারুণ রোমাঞ্চিত একটা শেষ বিকেল আর সন্ধ্যা নামার আগের গোধূলি উপভোগ করা যায় এখানে। পাশেই অন্য একটা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া বিশাল এক বুদ্ধমূর্তি।
কাচের এই ওয়াক ওয়ে থেকে চারপাশের যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, শুধু পাহাড় আর পাহাড়ের সারি চোখে পড়বে। ছোট, বড়, মাঝারি নানা রকমের পাহাড়ের চোখধাঁধানো সৌন্দর্য বিমোহিত করবে পাহাড়প্রেমী না হলেও। ভাগ্য কিছুটা প্রসন্ন হলে পেলিংয়ে যদি তখন মেঘ আর কুয়াশার মান অভিমানের পর্ব না চলে, তাহলে পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সেই সঙ্গে হিমালয়ের বরফ মোড়ানো অসংখ্য চূড়া দেখার সুযোগ হতে পারে। অমন পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে হিমালয়ের কোলে সূর্য ডোবার দৃশ্য অন্য কোথাও দেখা যায় কি না সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশে যাঁরা ভাঙনে ব্যস্ত বিশাল সর্বনাশী তিস্তা নদী দেখে অভ্যস্ত, পেলিংয়ে তাঁরা দেখতে পাবেন এই তিস্তার ভিন্ন রূপ। পেলিংয়ের তিস্তা স্থূল নয়, দুকূল ছাপিয়ে বয়ে যাওয়া এলোকেশী নয়। পেলিংয়ের তিস্তা খরস্রোতা, ছিপছিপে, নির্মেদ। মূলত, পেলিং থেকে গ্যাংটক অথবা গ্যাংটক থেকে পেলিং কিংবা শিলিগুড়ি থেকে পেলিং যাওয়া–আসার পুরোটা পথে রাস্তার এক দিক দিয়ে নীলাভ তিস্তার বিশ্রামহীন বয়ে চলা দেখা যায়। পাহাড়ে, পাথরে, অরণ্যের সঙ্গে মিতালি করে আকাশের রং মেখে নিজের খেয়ালে বিরামহীন ছুটে চলেছে এ তিস্তা। সে এক অন্য আবেশ, ভিন্ন পৃথিবী। এমন ভিন্ন এক পৃথিবীতে এসে ক্লান্তিহীন, আবেশ ভরা সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছিল কয়েক দিন আগে।
৪.
পেলিংয়ের অধিবাসীরা ভীষণ সংস্কৃতিমনা আর শিক্ষিত—কথা বলে সেটা বোঝা যায়। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সিকিমের বাইরে, বিশেষ করে শিলিগুড়িতে পড়াশোনা করে। গান ও নাচ ওদের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। পেলিংয়ে যে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়েছে, সেটা হলো তাদের পরিচ্ছন্নতা। ঘরবাড়ি হোক বা পথঘাট অথবা বাজার, সব জায়গাই যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কাজেই যাঁরা সিকিম ঘুরতে যাবেন, তাঁরা পরিবেশের কথা মাথায় রাখবেন। প্লাস্টিকসহ যেসব জিনিস সিকিমে নিষিদ্ধ, সেগুলো ব্যবহার করবেন না কোনোভাবেই। সরাসরি গ্যাংটক থেকে পেলিং যাওয়া যায়। এ ছাড়া শিলিগুড়ি থেকেও যাওয়া যায়। সিকিম যেতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। শিলিগুড়ি থেকে মেল্লি গিয়ে সেখানে অনুমতি নিয়ে পেলিং প্রবেশ করা যায়। অথবা শিলিগুড়ি থেকে রাংপো গিয়ে সেখানে অনুমতি নিয়ে তারপর সিকিম প্রবেশ করা যায়। অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখবেন এবং যাওয়া-আসার পথে প্রয়োজনীয় জায়গায় পাসপোর্টে সিল দিয়ে নেবেন।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত আয়োজন এখানে অপেক্ষা করছেপূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত ...
৭০৬ বার পড়া হয়েছে




