বন্দিত্ব কারও জন্যই সুখকর নয়, কাম্য নয়, হোক সে মানুষ বা পশুপাখি। ছোট্ট একটা জীবনে কেউই চায় না বন্দিত্বের স্বাদ নিতে। তবুও মাঝেমধ্যেই নানা কারণে আমরা বন্দী হয়ে পড়ি সমাজ, সংসার আর জীবনের নানা প্রয়োজনে। তবে সেটা সাময়িক। নিজেরাই নিজেদের সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো বন্দী করে রাখি ঘরে, অফিসে বা সামাজিক কোনো কাজে, এই ভেবে যে ব্যস্ততা শেষ করেই ছুটে পালাব প্রিয় কোনো গন্তব্যে। পাহাড়ে, অরণ্যে বা সমুদ্রে অথবা নির্জন কোনো গ্রামে। এমন সুখস্বপ্ন নিয়ে আমরা মাঝেমধ্যে সাময়িক বন্দিত্ব বরণ করে নিই হাসিমুখে।

সামনে আসছে ঈদ। এই ঈদে আমার মতো বহু মানুষের পরিকল্পনা ছিল দেশে বা দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার। আমার নিজেরই পরিবার নিয়ে ভারতের দুর্গমতম একটা পর্যটন স্পট স্পিতি ভ্যালি যাওয়ার কথা ছিল। যাওয়া–আসার টিকিটসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করাই ছিল। শুধু ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারিতে। শুধু আমার কেন, আমার মতো হাজারো, লাখো মানুষের নানা জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে অনির্ধারিত সময়ের জন্য। তাই মন খারাপ হয়েছে, হবে। সেটাই স্বাভাবিক। যতই বলি যে মন খারাপ করা যাবে না, মন খারাপ করা ঠিক না, মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। কিন্তু সবকিছুর পরেও আমরা মানুষ তো। চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, নানা রকম স্বপ্ন-কল্পনা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই আমাদের মূলমন্ত্র। আর বছরজুড়ে দেখা কোনো স্বপ্ন, দীর্ঘ প্রস্তুতি নেওয়ার পরে যদি সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়, তবে মন একটু হলেও খারাপ হবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। আমাদেরও হয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের সুন্দর একটা আগামীর জন্য সেই মন খারাপকে, মনমরা হয়ে যাওয়া মনকে, গুমোট হয়ে যাওয়া হৃদয়কে ধীরে ধীরে শান্ত, স্বাভাবিক আর প্রফুল্ল করে তুলেছি যেভাবে। আমরা আমাদের বলেছি, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে নানা রকম বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের ভালো আর সুস্থ রেখে একটি সুন্দর আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আমরা আমাদের বুঝিয়েছি, এই সময়ে আবেগের বশে কোথাও বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে খারাপ থাকার চেয়ে, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার চেয়ে, বিড়ম্বনায় পড়ে ভ্রমণের আনন্দকে নষ্ট করার চেয়ে, আজকে ঘরে থেকে, ভালো থেকে, সুস্থ থেকে, বেঁচে থেকে, চলো আগামীর জন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখি, আরও রঙিন করে নতুন কোনো ভ্রমণ পরিকল্পনা করি, আরও দুর্গম, আরও প্রশান্তিময় কোনো জায়গায় যাওয়ার ছক আঁকি, আরও স্মরণীয় কিছু পাওয়ার অপেক্ষা করি।

তাই এই সময়ের ভ্রমণ–দুঃখ ভুলে যেতে আমরা প্রতিদিন যেটা করছি। সবাই সবাইকে সাংসারিক সব রকমের কাজে সাধ্যমতো সাহায্য করছি। কাজ শেষ করে আমরা আমাদের পুরোনো দিনের ভ্রমণের রঙিন ছবি দেখি, সেই সময়ের বর্ণিল স্মৃতি নিয়ে আলাপ করি, কোন জায়গার ভ্রমণটা কতটা মজার ছিল সেটা নিয়ে তর্ক করি, কোন জায়গায় গিয়ে তৃপ্তি মেটেনি, আবারও যেতে চাই সেসব নিয়ে যুক্তি করি। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট ও সিনেমা দেখে সাধ্যের মধ্যে দুর্লভ দুর্লভ ভ্রমণ স্পটের তালিকা করে রাখছি। আর যেটা করছি, আসছে ঈদে বেড়াতে গেলে যে খরচটা হতো সেটা খরচের খাতাতেই ধরে নিয়ে জমিয়ে রাখছি। এই বাজেট আর আগামী ভ্রমণের বাজেট দুটো একসঙ্গে করে বেশ বড়, দুর্লভ আর কাঙ্ক্ষিত কোনো একটা জায়গায় সবাই মিলে বেড়াতে যাব। সব ঠিক হলে, ভালো থাকলে, বেঁচে থাকলে।

এভাবে প্রতিদিন আমরা আমাদের সময় দিচ্ছি, ধীরে ধীরে কোথাও যেতে না পারার হতাশা থেকে নিজেদের মুক্ত করছি। আর যেটা করছি সেটা হলো, ব্যস্ত জীবনে পরিবারকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না আমাদের। তাই সবাই মিলে সবাইকে সময় দিচ্ছি। পুরোনো ছবি দেখে, নানা স্মৃতি মনে করে নতুন নতুন লেখা লিখছি, যখন সবকিছু ঠিক হবে, সেই সময়ের জন্য নানা রকম পরিকল্পনা করে রাখছি। যেন সময়, সুযোগ পেলেই ছুটে যেতে পারি।

আমার মতো যাঁরা কদিন পরপর ভ্রমণে বের হতেন, হতে চাইতেন। এই সময় বা আসছে ঈদে দূরে কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তাঁরা সবার আগে যেটা করতে পারেন সেটা হলো, এই সময়ে মন খারাপ করে কোথাও অযথা অর্থ খরচ বা অপচয় না করে সেটা জমিয়ে রেখে পরে একটা সুন্দর জায়গায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন, যেটা আপনার সাধ্যের বাইরে ছিল এত দিন। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। ঘরে থেকে পুরোনো ছবি দেখে, স্মৃতি নিয়ে, নিজের অব্যক্ত কথাগুলো লিখে রাখতে পারেন। কোনো এক সুন্দর, সুস্থ আর দুর্লভ আগামীর জন্য। আপনি ভালো আর সুস্থ না থাকলে, একটি সুন্দর আগামী হারাবেন।

তাই সবার আগে পরিচ্ছন্ন থাকুন, অন্যকে সচেতন করুন, যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন, সাধ্যের মধ্যে অন্যকে সাহায্য করুন।

লেখক: পর্যটক

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনুন

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনু...



৪১৯ বার পড়া হয়েছে