জীবনের সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো জমি। সেটি হতে পারে বসতভিটা, কৃষি জমি অথবা অন্যকোনো জমি। এ পুঁজি অর্জন করতে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় তাকে।
মেধা, শ্রম, ঘাম ঝরিয়ে অর্থ উপার্জন করে মানুষ জীবনের সম্বল হিসেবে জমি ক্রয় করে থাকেন। তাই জমি ক্রয় করতে অবশ্যই আইনের কিছু ধারণা থাকা জরুরি।
ব্যত্যয় ঘটলে হয় মামলা মোকাদ্দমা। হানাহানি, মারামারি এমনকি খুন-খারাবিও। এ সংক্রান্ত বিরোধ একবার শুরু হলে সেটি মিটানো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
জমি ক্রয়ের আগে ক্রেতাকে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, তা তুলে ধরা হলো-
ক. বিক্রয় করা ভূমির সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে বিক্রেতার নাম আছে কি না সেটি যাচাই করে দেখা।
খ. যদি বিক্রেতার নাম খতিয়ানে না থাকে তবে, ভূমিতে বিক্রেতার স্বত্ব বৈধ কাগজপত্র দ্বারা প্রমাণ করতে হবে বিক্রিত ভূমি কোন মৌজায় অবস্থিত, কোন খদতিয়ানে, কোন দাগভুক্ত, ইহার পরিমাণ কতটুকু, উক্ত খতিয়ানে বিক্রেতার অংশ বা হিসাব অনুযায়ী পরিমাপ ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে।
গ. দলিল দেখে যদি ভূমি ক্রয় করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
১. দলিল দাতা বা দাতাদের নাম, ভূমির বিবরণ ও পরিমাণ, সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে লেখনভুক্ত রয়েছে কি না, লেখনভুক্ত খতিয়ান না হয়ে থাকলে যারা জমি ক্রয় করেছিল তাদের ব্যাপারে জানতে হবে। কিভাবে তারা জমিটি পেয়েছেন। তা অবশ্যই কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে।
এরূপ খতিয়ানে লেখনভুক্ত মালিক কর্তৃক বিক্রিত হওয়ার পর উক্ত ভূমি যতবার বিক্রি হয়েছে এবং এ কারণে যতটি দলিল সম্পাদিত হয়েছে ততটি দলিল পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
২. অন্যকোনো ব্যতিক্রম না থাকলে কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট খতিয়ানভুক্ত মালিক মৃত্যুর পর তার উত্তরাধীকারীগণের ভূমি হস্তান্তর করতে পারেন। সুতরাং বিক্রি বা মালিকানা স্বত্ব অর্জনের ধারাবাহিকতা অবশ্যই দেখতে হবে।
৩. হাল খতিয়ান ও হাল দাগ চালু হওয়ার পূর্বেকার সম্পাদিত দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান ও দাগ নম্বর, সাবেক দাগ ও খতিয়ান নম্বরে পরিগণিত হয়েছে।
সুতরাং দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান দাগ যাহা সাবেক খতিয়ান ও দাগ নম্বর পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে বর্তমান চালু (হাল) খতিয়ান, দাগ ও জমির পরিমাণের সঙ্গে মিল আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।
৪. বিক্রির পর ক্রেতার নামজারি না হওয়ায় কিংবা ক্রেতা নামজারি না করার দরুন এই সুযোগ বিক্রেতা প্রতারণামূলক অন্যের বা ২/৩ জনের কাছ থেকে গোপনে বিক্রি করে থাকতে পারে। সুতরাং ক্রয়ের পুর্বে এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এরূপ ঘটনা কখনো কখনো ঘটে থাকে।
৫. বিক্রিত ভূমি বিক্রেতার দখলে আছে কি না তাও দেখতে হবে, বকেয়া ভূমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের জন্য ভূমি নিলামে বিক্রি হয়েছে কি না অথবা সরকার নিলামে ক্রয় করে খাস করেছেন কি না তাও দেখতে হবে।
৬. যে সব হিন্দু নাগরিক তাদের জমি-জমা পরিতাগ করে বাস্তু ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন তাদের অনেকের ভূমির অর্পিত ও অনাবাসি সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এগুলো সরকারের তত্বাবধানে রয়েছে। সুতরাং এরূপ হিন্দু মালিকদের সম্পত্তি পরিত্যাগ হওয়ার দরুন খাস বা অর্পিত অনাবাসি সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে কি না তাও দেখতে হবে।
Featured Product
Kandy- Nuwara Eliya- Galle & Colombo 6D/5N
ফিলিপাইন ভিসা প্রসেসিং (চাকুরীজীবী)
শ্রীলংকা ভিসা (চাকুরীজীবী)
৭. যে সব মালিক ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল এবং তাদের ভূমি বা বাড়িঘর ত্যাগ করে বাংলাদেশ হতে চলে গিয়েছিল, তাদের ভূমি পি-ও ১৬/৭২ বলে পরিত্যক্ত ভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং উনারা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়। এই শ্রেণীর মালিকদের ভূমি ক্রয় করার সময় অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।
৮. যে সব ভূমির খাজনা বা ভূমির উন্নয়ন কর দীর্ঘদিন যাবত অনাদায় রয়েছে অথবা মারফতদার কর্তৃক খাজনা বা কর পরিশোধ হয় তহসিল অফিসে ইহার কারণ অনুসন্ধান করলে প্রকৃত ভূমির স্বত্বাধিকারী এবং ইহার অবস্থা কি তা সহজেই জানা যাবে।
তা ছাড়া ভূমির খাজনা বা উন্নয়ন কর অপরিশোধিত থাকলে নিলামে খাস হওয়া সন্দেহের অবকাশ থাকে। সুতরাং তহসিলে খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।
৯. টেস্ট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্স অ্যাক্টের ৯৭ ধারা অনুযায়ী কোনো আদিবাসীর ভূমি অনুরূপ আদিবাসী ব্যতিত অন্য কেউ ক্রয় করতে চাইলে বা অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে দলিল রেজিস্ট্রি করার পূর্বে রেভিনিউ অফিসারের লিখিত সম্মতি নিতে হবে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে ভূমি ক্রয় বা হস্তান্তর বাতিল হয়ে যাবে।
১০. প্রেসিডেন্ট আদেশ ৯৮/৭২ অনুযায়ী ১৩/৪/১৯৮৪ তারিখ পর্যন্ত কোনো পরিবার ১০০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি এবং (অধ্যাদেশ ১০/৮৪ ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৪ ধারা যে সকল মালিক বা পরিবারের ৬০ বিঘার নিম্নে অথবা ৬০ বিঘা পর্যন্ত ভূমি ছিল তারা উক্ত অধ্যাদেশ জারির তারিখ হতে ( অধ্যাদেশ ১০/৮৪ জারির তারিখ ১৪/৪/৮৪ ইং বাংলা ১ বৈশাখ ১৩৯১) ৬০ বিঘার অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় বা অন্যাবিধ উপায়ে অর্জন করতে পারবেন না।
উক্ত অধ্যাদেশ বা আদেশ লঙ্ঘন করে যদি কোনো মালিক বা পরিবার উপরোক্ত সীমায় অতিরিক্ত ভূমি ক্রয় করেন তাহলে এরূপ অতিরিক্ত ভূমি সরকারের বরাবরে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
১১. দলিলে খতিয়ানে মালিকদের নাম ভায়া দলিল থাকলে উহার নম্বর দাতা গ্রহীতা ইত্যাদির বৃত্তান্ত দলিলে উল্লেখ থাকা একান্ত আবশ্যক।
১২. দলিলে তফসিলে জেলা থানা মৌজা খতিয়ান দাগ, ভূমির মোট পরিমাণ এবং কাত যদি থাকে এবং চৌহদ্দি শহরের ভূমি হলে রাস্তার পৌর নম্বর থাকলে সেটিসহ তদস্থিত দালান কোটা যদি থাকে তবে সঠিকভাবে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন।
৩১৫ বার পড়া হয়েছে