সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় মানুষের রুচিবোধের, পছন্দ-অপছন্দের। একটা সময় ছিল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সবাই ছুটত কর্পোরেট হাউসের লোভনীয় চাকরির পিছনে। সময় বদলেছে, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে তারুণ্যের আগ্রহের গতিপথও।

কর্পোরেট অফিসের চার দেয়ালের মাঝে বন্দি কোনো চাকরি নয়; তারুণ্যের মনোনিবেশ এখন সৃজনশীল ও গ্ল্যামারাস পেশায় স্বপ্নময় ক্যারিয়ার গড়ার দিকে। যেখানে থাকবে রোমাঞ্চ, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে স্বকীয় পরিচিতি, একটি নিজস্ব সত্তা। আর এ ধরনের পেশার তালিকায় বর্তমানে যে ক্ষেত্রটি সবচেয়ে সাড়া ফেলছে তা হচ্ছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যারা এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তারাও পড়তে পারেন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এসএসসি/এইচএসসির পরই অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পরপরই আপনি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে গ্লোবাল ডিগ্রি নিতে পারেন। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও/এ লেভেল পাস করে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা দেশেই শুরু করতে পারেন এ বিষয়ে পড়াশোনা।

যুক্তরাজ্যের শিক্ষাবোর্ড BTEC Edexcel-এর অধীনে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও এভিয়েশন ম্যানেজমেন্টসহ এয়ালাইন্স সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করছে দেশের কয়েকটি অ্যাভিয়েশন কলেজ। এগুলোতে এসএসসি/ও-লেভেল পাসের পর ১৮ মাসে ন্যাশনাল ডিপ্লোমা, এইচএসসি/এ-লেভেল পাসের পর ১৮ মাসের হায়ার ন্যাশনাল ডিপ্লোমা এবং ১ বছরে Top up করে বিএসসি ইন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগও রয়েছে।

প্রসপেক্ট
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) তথ্য মতে পৃথিবীতে প্রতিবছর বিমান পরিবহনে ২৩ হাজার পাইলট ও বিমান রক্ষণাবেক্ষণে ৩০ হাজার জনবল দরকার হচ্ছে। আগামী ২০ বছরে অ্যাভিয়েশন সেক্টরে ১৭ হাজার নতুন দ্রুতগামী বাণিজ্যিক বিমানসহ ২৫ হাজার নতুন এয়ারক্রাফট, ৪ লাখ ৮০ হাজার টেকনিশিয়ান এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার পাইলটের প্রয়োজন হবে। এগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় দরকার হবে দক্ষ অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারের। এর রয়েছে আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্র। যেমনটি জানান সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের সোহানা মাহজাবিন। ‘এভিয়েশন সেক্টরে কাজ করা যেমন মর্যাদার তেমনি অ্যাডভাঞ্চারাস।

এখানে রয়েছে গ্লোবাল ক্যারিয়ার। আপনি এ কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে গোটা বিশ্ব হবে আপনার কর্মক্ষেত্র। সেই সঙ্গে রয়েছে অবারিত সুযোগ-সুবিধা। উচ্চ বেতন কাঠামো, চিকিৎসা ভাতা, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সহজেই যাতায়াত, এসব সুযোগ রয়েছে এখানে’- বলেন সোহানা। এসব বিবেচনায় বিজ্ঞানে ছাত্ররা এ বিষয়ে পড়ে গড়ে তুলতে পারেন অ্যাভিয়েশন সেক্টরে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার।

কর্মক্ষেত্র
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা শামীম আহসান জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ৩৭টি এয়ারলাইন্স কোম্পানি রয়েছে। আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, নভো এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ইত্যাদি।

এছাড়া দুনিয়াজুড়ে ৫ হাজার ৫১০টিরও বেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে রয়েছে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার লোভনীয় সব অফার।

ইউনাইটেড কলেজ অব অ্যাভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী জানান, এশিয়া মহাদেশের মালয়েশিয়া, থাই এয়ার ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ইতিহাদ, এমিরেটস ও গালফ এয়ার এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারদের এত বেশি চাহিদা যে, অন জব ট্রেইনিং করার সময়েই অনেকে ভালো চাকরির অফার পেয়ে যান।

এছাড়া বিশ্বে সিভিল এভিয়েশন রয়েছে ১৮৯টি, ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি রয়েছে ২৩২, বিমান মেন্টেইনেন্স রিপিয়ার অর্গানাইজেশন রয়েছে ৮৬০টি।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Singapore Tour with Sentosa 4D/3N

মূল্য: ২৪,৯০০ টাকা

Paradise island, Maldives, 4D/3N

মূল্য: ৯১,৯০০ টাকা জনপ্রতি

কাজ
এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার বিমানের যাবতীয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি-বিচ্যুতির মেরামত, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিদর্শন কার্যক্রম তথা বিমানকে সার্বিকভাবে উড্ডয়নোপযোগীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মূলত মেশিন তৈরি, বিমানের ডিজাইন উন্নয়ন এবং উড্ডয়নের আগে ও পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, স্যাটেলাইট অ্যান্ড স্পেসক্রাফট, এয়ারফ্রেম তৈরি বা এয়ারফ্রেম ইঞ্জিন সৃষ্টি করা, এয়ারক্রাফট ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির সংযোগ স্থাপন, উন্নয়ন ও মেরামত করা শেখানো ও এয়ারক্রাফট ককপিটে অবস্থিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং ডিসপ্লে রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ ও মেরামত করা শেখানো হয়।

কোথায় পড়বেন
অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অনুমোদিত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা ও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শুধু মিরপুরের মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) এ বিষয়ে ৪ বছরমেয়াদি ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের শিক্ষাবোর্ড ইঞঊঈ ঊফবীপবষ-এর অধীনে ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশন, সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হচ্ছে। কলেজটিতে অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট, এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোর্সও করানো হচ্ছে। ঠিকানা- সেক্টর-০৩, রোড-০৪, বাড়ি-১৬, উত্তরা, ঢাকা ফোন- ৭৯১১৮৩১, ০১৯৭০ ৬০৮০৭১, ০১৭৫৬৭৬৬৫৬০ ওয়েব : www.uca.edu.bd।

এছাড়া বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত কোর্স করানো হচ্ছে। যারা অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে আগ্রহী তারা এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হতে পারেন।

বাড়ছে চাহিদা
বিদেশী এরির‌্যাং এভিয়েশন লিমিটিডের (ইয়ংগুন ভিত্তিক) এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার শাকিল মাহমুদের মতে, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাটি সম্মানের ও চ্যালেঞ্জিং। পাস করার পর দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোয় রয়েছে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ। কাউকে বসে থাকতে হয় না।

আরেকজন বিমান প্রকৌশলী আহসানুল হক বলেন, একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ইংরেজিতে ভালো জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। সেই সঙ্গে থাকা চাই সাহস, দূরদৃষ্টি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১,০৫৯ বার পড়া হয়েছে