আমার প্রথম গাড়িটা দিয়ে আমি সারাদেশ ঘুরেছিলাম। গাড়ি কিনেই পরদিন বের হয়ে যাই। সঙ্গে হাবিবুর রহমান চুন্নু। রোর্টাযাক্ট ক্লাবে আমার ছোট ভাই; এখন লন্ডনে থাকে।
গাড়ি নিয়ে যাব কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুর। তারপর নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দিকে।
গাড়িটা প্রথম মেঘনা সেতু পার হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আবিস্কার করলাম, গাড়ির গতি ৩৫ কিলোমিটারের নিচে নামলেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
স্পিড ছবির মতো আমি গাড়ির গতি কমপক্ষে ৩৫ রেখে গাড়ি চালাতে থাকলাম, যাতে গাড়ি বন্ধ না হয়। এভাবে কুমিল্লা চলে গেলাম। যে কোনো সময় গাড়ি বন্ধ হলে পেছন থেকে আমার গাড়িকে ধাক্কা দিতে পারত কোনো বাস বা ট্রাক। আমার মুখোমুখি ধাক্কা খাবারও অশঙ্কা ছিল। কারণ ৩৫-এর নিচে গতির যে কোনো যানবাহন যেমন অটোরিকশা ও রিকশা দেখলে সেটাকে ওভারটেক করতে হচ্ছিল। তখন উল্টো দিক থেকে গাড়ি এলে খবর ছিল।
ওটাই আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গাড়ি চালনা। কুমিল্লা শহরে পৌঁছে আমরা একজন মিস্ত্রি পেলাম। সে জানাল, কার্বুরেটর সার্ভিসিং করলে এটা ঠিক হয়ে যাবে। সে নিজেই সব খুলে কেরোসিন ও অকটেন দিয়ে ধুয়ে দিল। গাড়ি ঠিক হলো। আর কখনও গাড়ি এভাবে বন্ধ হয়নি। এ গাড়িটা দিনের বেলায় থাকত সিদ্ধেশ্বরীতে, ইমপ্রেসের গ্যারেজে। একদিন দেখি, ছয়-সাত বছরের ছোট্ট একটি ছেলে গাড়িটার সামনে বসে আছে এবং তার মা তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সে বলছে, বাবার গাড়ি। বাবা এখানে আছে। আমি বাবার কাছে যাব।
গাড়িটা আমি কিনেছিলাম পুরনো গাড়ির ব্রোকার বাগদাদ অটোমোবাইলের দোকান থেকে। মালিক কে, আমি জানতাম না। কারণ সব কাগজে মালিকের সই আগে থেকেই ছিল।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তোমার বাবা কই?
সে বলল, বল তুমি- আমার বাবা কই?
ওর মা বললেন, কিছু মনে করবেন না ভাই। এটা ওর বাবার গাড়ি ছিল। ও ভাবছে, ওর বাবা এখানে আছে। গাড়িটা দেখে বলছে, বাবা এখানেই আছে, আসতে বল।
আমি বললাম, ওর বাবাকে বলেন আসতে।
মায়ের চোখে পানি।
ওর বাবার ক্যান্সার হয়েছিল। তখন অনেক টাকা দরকার। তাই আমরা গাড়িটা বেচে দিই। আমরা আত্মীয়ের বাসায় এসেছি। এসে আমার ছেলে গাড়িটা চিনে ফেলেছে। এখন আমার ছেলে ভাবছে, গাড়িটা যেহেতু এখানে, ওর বাবা এখানে আছে।
ওর বাবা এখন আর নেই ভাই। অনেক বুঝিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হলো। এর অনেক দিন পর এক অনুষ্ঠানে একটি ছেলে আমার কাছে জানতে চায়, আঙ্কেল, আপনার স্টারলেট গাড়িটা কই? আমি তাকে চিনি নাই।
তুমি গাড়ির কথা জানো কীভাবে?
– আমি আপনার সেই গাড়িটার সামনে একদিন বসে ছিলাম। আপনি আমার বাবার গাড়িটা চালাতেন।
বাবা, আমি তো গাড়িটা অনেক পুরনো হয়েছিল বলে বেচে দিয়েছি।
– কার কাছে আছে, জানেন?
না বাবা। কেন?
– গাড়িটা আমি আবার কিনব। বাবার গাড়ি তো, আমার বাবার স্ট্মৃতি।
আমার চোখ ছলছল করে উঠল। চোখের জল লুকিয়ে বললাম…
এমন জানলে আমি গাড়িটা বেচতাম না বাবা। আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম এমনিতেই। তারপর আমি গাড়িটা অনেক খুঁজেছি। আর পাইনি। যার কাছে বেচে দিয়েছিলাম তার কাছেও নেই। তিনি বললেন, তিনি গাড়িটা খুলনায় কারও কাছে বেচে দিয়েছেন। কাগজপত্র, নাম-ঠিকানা রাখেননি।
হয়তো পরে গাড়িটা স্ট্ক্র্যাপ হয়ে গেছে। গল্পটা বললাম এ কারণে যে, জীবন আমাদের বিরাট সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমি সেদিন বুঝেছি, মৃত্যুই কেবল আসল গন্তব্য। গাড়ি-বাড়ি থেকে যাবে। আর থাকবে হয়তো প্রিয়জনের অন্তরে কিছু স্ট্মৃতি।
যেমন আমার প্রথম গাড়িটা আমার কাছে কেবলই গাড়ি। কিন্তু ওই ছেলেটির কাছে তার বাবার গন্ধ মাখা, স্ট্মৃতির আঁধার।
হায়রে জীবন!
কত অল্পেই ফুরিয়ে যায়! হ

রেফারেন্সঃ সমকাল থেকে নেওয়া

ফিচার বিজ্ঞাপন

Manila & Angeles City 5D/4N

মূল্য: 55,900 Taka

Thimpu-Paro 4D/3N

মূল্য: ১৫,৯০০ টাকা

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনুন

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনু...



৩,৩৬৫ বার পড়া হয়েছে