প্রাচীনকাল থেকে চীন তার সুবিশাল ভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সঞ্চিত
জ্ঞানগৌরব নিয়ে বিস্তৃত। আর তাই জ্ঞানার্জনের জন্য চীনে যাওয়ার প্রবাদ
মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
আমি মেডিকেল এর ছাত্র। হাসপাতালের চার দেয়াল আর রোগীদের সঙ্গে বাঁধা আমার
জীবন। লেখালেখি করার সুযোগ নেই বললেই চলে। তারপরও চীনে পড়াশোনা নিয়ে আজ
কিছু লিখতে বসলাম।
তিন বছর ধরে চীনে আছি। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী, স্থানীয় মানুষ,
প্রকৃতি সবই মোটামুটি বহু কাছ থেকে দেখা হয়েছে। আমি আমার লেখায় মূলত যারা
উচ্চ মাধ্যমিকের পর চীনে পড়তে আসতে চায় তাদের একটুখানি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা
করব। যেহেতু আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র তাই প্রথমেই আসি এমবিবিএস নিয়ে।
চীনে প্রায় এক হাজারের উপর বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিছুদিন আগে
একটা সংস্থা এক হাজার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে। তারমধ্যে এশিয়ার
দেশ চীনের রয়েছে সর্বোচ্চ ৯২টি, ভারতের দুটি ও পাকিস্তানের একটি
বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চীনের সব বিশ্ববিদ্যালয় ওভারসিজ স্টুডেন্ট বা বিদেশি
শিক্ষার্থী নেয় না। আবার যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ার
সুযোগ রয়েছে, সেগুলোর সবকয়টিতে বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিডিএমসি) অনুমোদিত ৫২টি
বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে চীনে। কেউ চাইলে এর যে কোন একটিতে বিডিএমসি থেকে
এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তারি পড়তে যেতে পারবে।
এখান থেকে এমবিবিএস শেষ করার পরে ইন্টার্নশিপ চাইলে দেশে এসেও করা যায়।
আবার চাইলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও করা যায়। তবে হ্যাঁ, ইন্টার্নশিপ করার
পর বিডিএমসি-তে একটি একশ মার্কসের সনদ পরীক্ষা দিতে হয়, সময় থাকে একশ
মিনিট। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশের মেডিকেল এর মতোই। মানে
নতুন নিয়ম অনুসারে এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে।
সুতরাং এসএসসি ও এইচএসসি-তে খারাপ রেজাল্ট করে চীনে পড়তে গেলেও পাশ করার পর
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডাক্তারির সনদ পাওয়া যাবে না।
এবার আসি খরচ ও পড়াশোনার মান নিয়ে। চীনে পড়াশোনা বিশ্বমানের হয় বলেই
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছর রেংকিং-এ ভাল অবস্থানে থাকে।
ওভারসিজ স্টুডেন্টদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক, প্রতিটা
বিষয়ের জন্য আলাদা ল্যাব, কয়েক লাখ বইসমৃদ্ধ সুবিশাল লাইব্রেরি আর
প্র্যাকটিসের জন্য রয়েছে হাসপাতাল।
অবকাঠামোগত দিক থেকেও মান অনেক ভাল। অ্যানাটমি ল্যাবের পর্যাপ্ত ডেড বডি,
পর্যাপ্ত অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং সার্বক্ষণিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ
ছাত্রদের পড়াশোনায় নতুন মাত্রা জুড়ে দেয়।
হাসপাতালগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা হয় না। ওখানে
ছাত্রদের ৪-৫ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে দেওয়া হয়। প্রতিটা গ্রুপকে সহযোগিতা
করার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক বা সমন্বয়ক থাকেন। ভাষাগত সমস্যা তারাই সমাধান
করে দেন। রোগীর সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে তারাই অনুবাদকের কাজ করেন।
চীনে মেডিকেল পড়ার জন্য টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, থাকা খাওয়া সব মিলিয়ে পাঁচ
বছরে ন্যূনতম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। বলে রাখা ভাল, এখানে বাংলাদেশের
বেসরকারি মেডিকেলের মতো কোন এক্সট্রা হিডেন চার্জ বা ডোনেশন সিস্টেম নেই।
টিউশন ফি প্রতি বছর একবার পে করতে হয়। তাই ফ্যামিলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে
না।
চীনে পড়াশোনার জন্য আবেদন করা খুব সহজ। তবে সঠিক মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে করতে হবে। কিন্তু এখন বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে
অনেক কমার্শিয়াল কন্সালটেন্সি ফার্ম। এদের খপ্পরে পড়লে আবেদনকারীর টাকা এবং
সময় দুটোই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আরেকটা তথ্য, চীনে এমবিবিএস বা বিডিএস এর জন্য সাধারণত কোন স্কলারশিপ পাওয়া
যায় না। তবে পিজি বা পিএইচডি এসবের জন্য স্কলারশিপ পাওয়া যায়।
ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিদ্যার শিক্ষার্থীদের অবশ্য মেডিকেলের মতো কোন
ঝামেলা নেই। তারা যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করলেই হবে। আর
পড়াশোনা শেষ করে তারা বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর যে কোন দেশে চাকরি করতে
পারবেন।
চীনে এমবিবিএস বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে কিন্তু কোন আইইএলটিএস বা টিওএফইএল
লাগে না। তবে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের এখন অনেক ভাল ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এসব স্কলারশিপ বিভিন্ন রকম। কোথাও শুধু টিউশন ফি ফ্রি,
কোথাও হোস্টেল ফি ফ্রি, আবার কোথাও দুটোই ফ্রি। তারসাথে আবার মাসিক
স্টাইপেন্ড বা ভাতাও দেয়া হয়।
চীনা ভাষা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু এটা মোটেও চিন্তার কোন
ব্যাপার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবাই ইংরেজিতেই কথা বলেন। বিদেশি
শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমেই ক্লাস হয়। তাছাড়া
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ফ্রি চায়না ভাষার ক্লাসও অফার
করে। ভালোভাবে পড়াশুনা করলে ছয় মাসেই চীনা ভাষা শেখা সম্ভব।
চীনে বর্তমানে দুটো স্কলারশিপ চালু রয়েছে। একটা হলো সিএসসি স্কলারশিপ। এর
আওতায় টিউশন ও হোস্টেল ফি ফ্রি। আর সাথে থাকে স্মাতক পাশ ছাত্রদের জন্য তিন
হাজার ইউয়ান (প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ টাকা) এবং পিএইচডি ছাত্রদের জন্য তিন
হাজার পাঁচশ ইউয়ান (প্রায় ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা) মাসিক স্টাইপেন্ড।
এই স্কলারশিপের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন করা যায়। তবে
চাইলে অধ্যাপকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেও আবেদন করা যায়।
আরেকটি স্কলারশিপ হলো আইএসএসপি। এর আওতায়ও কিছু স্কলারশিপ পাওয়া যায়।
কিন্তু এতে সাধারণত মাসিক স্টাইপেন্ড থাকে না।
লেখক: চীনের সাউথওয়েস্ট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
ইমেইল: shadbinislam@yahoo.com
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
ফিচার বিজ্ঞাপন
মিনি সিঙ্গাপুর ময়নামতি প্রাইভেট ডে লং ট্যুর
Moscow, Novosibirsk ,Irkutsk & St.Petersburg 9D/8N
Canada Visa for Businessman
৯২৪ বার পড়া হয়েছে