শুদ্ধ বানান কোনটি?

ক) মূমুর্ষ
খ) মুমূর্ষু
গ) মূমূর্ষ
ঘ) মুমূর্ষ

উত্তরঃ খ) মুমূর্ষু

বাংলা শুদ্ধ বানান ও বানানরীতির সমাহার

১) বিসর্গ ও কোলনঃ আমরা প্রায়ই শিরোনাম বা প্রধান লেখার পরে বিসর্গ ( ঃ) ব্যবহার করি, অতঃপর বিসর্গের পরে বিস্তারিত বক্তব্য লিখি। এটি ভুল। মনে রাখতে হবে, বিসর্গ একটি অক্ষর, ফলে আমরা যেখানে ‘বিসর্গ’ ব্যবহার করি সেটি আসলে বিসর্গ না হয়ে কোলন (:) হবে। যেমন- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথাঃ এখানে যথার পরে বিসর্গ দেওয়া হয়েছে, এটি ভুল; এখানে কোলন (:) হবে। সেক্ষেত্রে এটি হবে- বাক্য পাঁচ প্রকারের, যথা:

২) স্পেসের ব্যবহারঃ দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোলন এসবের পর সবসময় একটা স্পেস হবে, তবে আগে কোন স্পেস হবে না। আর হাইফেনের (-) পরে স্পেস দিতে নেই।

ভুল: সাবরিনা অনেক ভালো,সুন্দর ,লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে।সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে।

শুদ্ধ: সাবরিনা অনেক ভা্লো, সুন্দর, লক্ষ্মী ও ভদ্র একটা মেয়ে। সে নিয়মিত ক্লাসেও উপস্থিত থাকে।

অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে কোলনের আগে স্পেস ব্যবহার করতে দেখা যায়। আসল নিয়মটা হলো কোলনের আগে অর্ধ-স্পেস ব্যবহারের। কিন্তু ইউনিকোডে অর্ধ-স্পেস সাপোর্ট না করায় কোলনের আগে কোন স্পেস ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

৩) কি ও কী

কি:

যেসব প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দ্বারা দেওয়া যায়, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে ‘কি’ ব্যবহৃত হবে। যেমন:

সাবরিনা কি আমাকে চেনে?

তোমার নাম কি যুক্তিযুক্ত?

অনিমেষ কি গিয়েছিলে?

মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই ‘কি’ শব্দটি হচ্ছে অব্যয় পদ।

অন্য বর্ণের সাথে একসঙ্গে ‘কি’ এর ব্যবহার হয়। যেমন:

কিনা- ফারিহা আজ কলেজে যাবে কিনা জানি না।

নাকি- তানিয়া আজ দুপুরে নাকি ভাত খায়নি।

কিরে- কিরে বন্ধু, আজ ক্লাস করবি না?

কিসে- হা হা, কিসে কী হল। (‘কি’ ও ‘কী’ একসঙ্গে লেখা)

কী:

যেসব প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দ্বারা দেয়া যায় না, অথবা মাথা নেড়ে বা সার্বজনীন ইশারায় দেওয়া যায় না, বরং উদ্ধৃতিমূলক কিছু জানতে চাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ‘কী’ ব্যবহৃত হবে। যেমন:

তোমার নাম কী?

নিশাত কী বলতে চাও, বলো।

কী বিষয়ে অনার্স করছো?

কী থেকে তেল হয়?

কী জন্য রেগে গেলে?

কী শীত কী গ্রীষ্ম!

মনে রাখা দরকার যে, এভাবে ব্যবহৃত এই ‘কী’ শব্দটি হচ্ছে সর্বনাম পদ।

বিভিন্ন পদরূপে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়। যেমন:

ফিচার বিজ্ঞাপন

Australia Visa for Businessman

মূল্য: 20,000 Taka

Moscow & St.Petersburg 6D/5N

মূল্য: 145,000 Taka

কী আনন্দ! – বিশেষণ

কী সুন্দর! কী অপরূপ! – বিশেষণের বিশেষণ

তুমি কী খাবে? – সর্বনাম

কীভাবে? – ক্রিয়া-বিশেষণ।

(কীভাবে বানানটি নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে, কেউ বলেন এটা হবে ‘কিভাবে’)

‘কি’ এবং ‘কী’ ব্যবহারের ভুলটি আমাদের সবচেয়ে বেশি হয়। সিংহভাগই আমরা সব জায়গায় কি ব্যবহার করি। অথচ কেবল ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বোধক উত্তর যেসব প্রশ্নের হয় সেসব ক্ষেত্রে ‘কি’ হবে। একটু খেয়াল করে কয়েকদিন চর্চা করলেই ভুলটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। উত্তরের পার্থক্যটা মাথায় রেখে লিখলেই ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

৪) ই, য় এবং ও এর ব্যবহার

ক্রিয়াপদের শেষে ‘ই’ থাকবে যখন বাক্যের কর্তা হলেন উত্তম পুরুষ (1st Person)। যেমন- আমি খাই।

আর নাম পুরুষ (3rd Person) এর ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে ‘য়’ থাকবে। যেমন- সে খায়।

মধ্যম পুরুষ (2nd Person) এর ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের শেষে ‘ও’ থাকবে। যেমন- তুমি যাও, বিস্কুট খাও।

এছাড়া কোনো শব্দের শেষে ‘ই’ যুক্ত হয় ওই শব্দের উপর জোর দেওয়ার জন্য। যেমন-

১) আমিই করব। (অর্থাৎ অন্য কেই নয় আমি করব)

২) আমি করবই। (অর্থাৎ কাজটা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ)

৩) এখনই যেতে হবে। (অর্থাৎ দেরি করা যাবেনা)

কোনো শব্দের শেষে ‘য়’ বিভক্তি আকারেও থাকতে পারে। যার অর্থ ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন- পাখিরা বাসায় (বাসা তে) ফিরেছে।

এছাড়া শব্দের শেষে ‘ও’ থাকতে পারে আর একটি কারণে। যেমন- আমিও যাব। (I shall go too. অর্থাৎ also বা too বোঝাতে।)

অনুগ্রহ করে কেউ ‘ই’ এবং ‘য়’ এর ব্যবহার গুলিয়ে ফেলবেন না। আমি যাই, সে যায় না লিখে আমি যায়, সে যাই লিখলে কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে। খুবই দৃষ্টি ও শ্রুতিকটু এটা। এই ‘ই’ ও ‘য়’ এর ব্যবহারটা বিশেষভাবে মনে রাখবেন।

৫) এক বচন ও বহু বচনের ভুল

ভুল: সব বন্ধুদেরকে বলেছি।

শুদ্ধ: সব বন্ধুকে বলেছি।

৬)  ন ও ণ

ঋ, র, ষ বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়; যেমন: ঋণ, বর্ণ, কারণ, ধারণা, দারুণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা।

যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ থাকে; তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়; যেমন : কৃপণ, নির্বাণ, নির্মাণ, পরিবহণ, গ্রহণ, শ্রবণ।

ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়, যেমন : বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড, ঘণ্টা।

বাংলা ক্রিয়াপদের অন্তঃস্থিত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না, যেমন : ধরেন, মারেন, করেন।

বিদেশি শব্দের দন্ত্য-ন কখনোই মূর্ধন্য-ণ হয় না; যেমন : কোরান, জার্মানি, ফরমান, ফ্রান্স, রিপন, লন্ডন, ড্যান্ডি, ইন্ডিয়া/ ইনডিয়া, প্রিন্ট, পেন্টাগন, মডার্ন, ইস্টার্ন, পর্নোগ্রাফি, কর্নার, বার্ন, হর্ন, পপকর্ন।

সন্ধি বা সমাসনিষ্পন্ন শব্দে ণ হয় না; যেমন: দুর্নীতি, দুর্নিবার, দুর্নাম, ত্রিনয়ন।

মানুষ “ন আর ণ”-এই দুটোর মধ্যে এতো বেশি গোল পাকায়, এটা ধারণার বাইরে। ছোটোখাটো বানান, যেমন- কারণ, নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ বানানেও অনেকেই দেদারসে ‘ন’ ব্যবহার করে। অথচ এসব জায়গায় ‘ণ’ হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ধারণা ও দারুণ বানানে ণ হলেও ধরন ও দরুন বানানে ন। বর্ণ থেকে উদ্ভূত বরনে ন হলেও বরণ করে নেয়ার বরণে ণ। এছাড়া ধরনা, ঝরনা/ঝর্না বানানে ন।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



৪২১ বার পড়া হয়েছে