সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার একদম সীমান্তবর্তী গ্রামের নাম ‘লাউড়েগড়’, যা এক সময় ‘লাউড়ের রাজধানী’ হিসেবে বিখ্যাত ছিল। কী ছিল না সেখানে! রাজা, রানি, প্রজাসহ আলাদা একটা রাজ্যই ছিল সেখানে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দ্বাদশ শতকে কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র বংশের কেশব মিশ্র প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন লাউড় রাজ্য ছিল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু বর্তমানে সেই রাজ্য এখন কিছুই নেই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বদলে গেছে। বদলে গেছে সেই বিখ্যাত লাউড়ের রাজধানীর নামও। এখন সেই লাউড়ের রাজ্যকে একনামে সবাই ‘কাঁঠাল রাজ্য’ হিসেবে চেনে।
সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার মধ্যে শুধু তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েগড় গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল ধরে। এমনকি রাস্তায় কাঁচা, পাকা কাঁঠাল পড়ে থাকলেও তা নেয়ার মতো কেউ থাকে না।
রোববার (২ মে) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দেশে অনেক রকমের ফলের গাছ থাকতে এই গ্রামের মানুষ বাড়ির সামনে থেকে শুরু করে পেছন পর্যন্ত শুধু কাঁঠাল গাছই লাগিয়েছেন। আর সেই গাছগুলোর নিচ থেকে শুরু করে ওপর পর্যন্ত শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল। এমনকি সরকারি, বেসরকারি রাস্তার পাশেও গ্রামের মানুষেরা কাঁঠাল গাছ রোপণ করেছেন। সূর্যের আলো যখন কাঁঠাল গাছগুলোর ওপর পড়ে তখন এক দৃশ্য ঝিলমিল করে।
লাউড়েগড় গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মা-বাবার কাছ থেকে শুনেছি আমাদের গ্রামে রাজ-রানি সবাই ছিল এবং আমাদের গ্রামকে “লাউড়ের রাজ্য’ বলা হতো, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সব বদলে গেছে। এখন এই গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে এই গ্রামকে সবাই “কাঁঠালের রাজ্য” হিসেবে চেনে।’
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা কুদরত পাশা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে-পেছনে ২০টি কাঁঠাল গাছ আছে, যার সব কয়টিতে কাঁঠাল ধরেছে। প্রতিবছর গাছগুলোর কাঁঠাল আমরা নিজেরা খাই, বিক্রি করি এবং দূর-দূরান্তের সব আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে দেই।’
একসময় কিছুই ছিল না গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলীর। দিনমজুরির কাজ করতেন। পরে অনেক কষ্ট করে দুই শতক জায়গা কিনে সেই জায়গায় শুধু কাঁঠাল গাছের চারা রোপণ করেন।
তিনি বলেন, ‘গাছ বড় হয়ে যখন কাঁঠাল ধরা শুরু করল তখন সেই কাঁঠাল বিক্রি করে আমার সুখের দিন ফিরল। এরপর থেকে আমার বাড়ির চারপাশসহ সব জায়গায় আমি নিজে কাঁঠাল গাছ লাগাই এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করি।’
সুনামগঞ্জের বাসিন্দা আরমান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোজার মধ্যে লাউড়েগড় আসছি কাঁঠাল কিনে নিয়ে বাসার সবার সঙ্গে ইফতারের সময় খাব বলে। আমি প্রতি বছর কাঁঠালের সময় আসলে এই গ্রাম থেকে কাঁঠাল নিয়ে যাই। কারণ এই গ্রামের কাঁঠাল ক্ষেতে অনেক সুস্বাদু।’
ফিচার বিজ্ঞাপন
Day Long Package
সাজেক ভ্রমণ ৩ রাত ২ দিন
ইস্তানবুল, কাপাডোসিয়া ও আন্টালিয়া ৮দিন ৭রাত
শনিবার (১ মে) লাউড়েগড় গ্রাম থেকে অটোরিকশায় করে ৫০টি কাঁঠাল নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করছেন সুনামগঞ্জের কাঁঠাল ব্যবসায়ী লেবু মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে লাউড়েগড় গ্রামের কাঁঠালের অনেক চাহিদা বেশি। কারণ এই গ্রামের কাঁঠাল খেতে অনেক মিষ্টি। বাজারে কাঁঠালের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আফতাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, লাউড়েগড় গ্রামে বালু ও মাটি ভালো থাকায় এই গ্রামে কাঁঠালের খুব ভালো ফলন হয়। তবে কৃষি বিভাগ থেকে যদি এই গ্রামের মানুষকে আরও উৎসাহ দেয়া হতো তাহলে গ্রামের মানুষের উপকার হতো।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েগড় গ্রামে কাঁঠাল বেশি হয়। তাই সবাই গ্রামটিকে ‘কাঁঠালের গ্রাম’ বলেই চেনেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব রকমের সুবিধা দেয়া হয়। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
Source: Jagonews24
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)২৫৭ বার পড়া হয়েছে